২১শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চট্রগ্রাম কারাগারে হাজতির মৃত্যু, নির্যাতনের অভিযোগ পরিবারের

মাসুদ পারভেজঃ

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রুবেল দে (৩৮) এক হাজতির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।ওই হাজতি রুবেল বোয়ালখালীর দক্ষিণ জ্যৈষ্টপুরার বাসিন্দা সুনীল দে-এর ছেলে। তিনি কারাগারের ৩ নম্বর পদ্মা ওয়ার্ডে বন্দি ছিলেন।এদিকে রুবেলের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে তার স্বজন কারাগারের ভেতরে নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন।রুবেলের খালাতো ভাই রাজীব দে বলেন, গ্রেপ্তারের পরে আদালত ভবনের হাজতখানায় আমরা দেখা করেছিলাম।গত ২৮ জানুয়ারি বিকেলে প্রিজন ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়ার সময় রুবেল সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। এরপর ২ ফেব্রুয়ারি তার সঙ্গে দেখা করতে আমরা চট্টগ্রাম কারাগারে গিয়েছিলাম।সেদিন আমরা দেখেছি, চারজন কারারক্ষী তাকে হুইলচেয়ারে করে ধরে ধরে নিয়ে আসছেন। আমরা রুবেলের ডান ভ্রু ও শরীরের আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়েছি। রুবেল তাকাতে পারছিল না, মুখ থেকে লালা ঝরছিল। সে সময় রুবেল এক রকম অচেতন অবস্থায় ছিল, আমরা কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ফেরত আসি। কারারক্ষীদের কাছে আমরা জানতে চেয়েছিলাম ওই অবস্থা কীভাবে হয়েছে কিন্তু তারা কোনো সদুত্তর দেননি।তিনি আরও বলেন, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলি। গত রোববার আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার উন্নত চিকিৎসায় জেল সুপারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। রাজীব পেশায় গাড়ির মেকানিক। চট্টগ্রামের মুরাদপুরে তার গ্যারেজ রয়েছে।স্থানীয় একজন ওয়ার্ড মেম্বার সকাল ৮টার দিকে বোয়ালখালীতে রুবেলের স্ত্রীকে জানান, আমার ভাই সকালে হাসপাতালে মারা গেছেন। জানার পরে আমি মেডিকেলে এসে দেখি রুবেলের লাশ স্ট্রেচারে। এক কারারক্ষী পাশে দাঁড়িয়ে আছেন।মামলার নথি থেকে জানা যায়, গত ২৭ জানুয়ারি রাতে বাড়ির পাশের এলাকা নন্দীপাড়া হরিমোহন এলাকায় চোলাই মদ বিক্রির সময় বোয়ালখালী থানা পুলিশের একটি দল রুবেলকে আটক করে। পুলিশ তার কাছ থেকে ২০০ লিটার মদ জব্দ করে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলাটি দায়ের করেছিলেন বোয়ালখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এসএম আবু মুসা। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরের দিন বিকেলে আদালত রুবেলকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়ার আদেশ দেন। এরপর থেকে রুবেল কারাগারেই ছিলেন।তবে চট্টগ্রাম কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘মাদক নেওয়ার কারণে হাজতি রুবেলের মানসিক সমস্যা উইথড্রল সিন্ড্রোম ছিল। আমরা প্রথমে তাকে আলাদা ওয়ার্ডে রেখেছিলাম। পরে তাকে পদ্মা ৩ নম্বর ওয়ার্ডে অন্য বন্দিদের সঙ্গে রাখা হয়। সেখানে মানসিক সমস্যা আছে এমন একাধিক বন্দিদের রাখা হয়েছে। ভোর রাতে বুকে ব্যথার কথা বললে আমরা তাকে কারা হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। কারাগারে কারারক্ষী বা অন্য বন্দি তাকে নির্যাতন করেনি।রুবেলকে গ্রেপ্তার করা উপপরিদর্শক (এসআই) মুসা বলেন, গ্রেপ্তারের সময় তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন। আমাদের হেফাজতে থাকাকালে তার কোনো ধরনের অস্বাভাবিক উপসর্গ খুঁজে পাইনি।রুবেলের আইনজীবী অজয় ধর বলেন, রোববার ষষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জেল সুপারকে রুবেলের উন্নত চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন, আর রাতেই তার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। জেল সুপার এই দায় এড়াতে পারেন না, কারণ আমার মক্কেল পুলিশ হেফাজতে পুরোপুরি সুস্থ ছিল। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রুবেলের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin
Share on print

আরও পড়ুন