৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চট্রগ্রাম নগরীতে বাজার গুলোতে গরুর সংকট নেই,দামে খুঁটি বাণিজ্যের প্রভাব

মাসুদ পারভেজঃ

চট্রগ্রাম নগরীতে বাজার গুলোতে গরুর সংকট নেই,চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামের স্থায়ী–অস্থায়ী ২৪৮ হাট মনিটরিংয়ের লক্ষ্যে ৬৭টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে দামে খুঁটি বাণিজ্যের প্রভাবনগরে আরো দুটি পশুর হাট চসিকের চট্টগ্রামে ২৪৮ হাটে চলছে বেচাকেনাগত কয়েক দিনে প্রচুর গরু নিয়ে এসেছেন বেপারিরা। গত রাতেও প্রতি রাতে ট্রাকে করে গরু প্রবেশ করিতেছে বাজারে। এখনো প্রচুর গরুবাহী ট্রাক পথে আছে। কোরবানের আগের দিন পর্যন্ত আসতে থাকবে।’গতকাল সোমবার কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাগরিকা পশুর হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম। হাট ঘুরেও এর সত্যতা মিলেছে। শহরের অন্যান্য স্থায়ী–অস্থায়ী পশুর হাটগুলোতেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরু নিয়ে আসছেন বেপারিরা। বাজারগুলোর ইজারাদারাও জানিয়েছেন, আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে আরো শত শত গরুবাহী ট্রাক বাজারে প্রবেশ করবে। ফলে চাহিদার বিপরীতে স্থানীয় উৎপাদন কম থাকায় কোরবানি পশু সংকটের যে সম্ভাবনা ছিল তা দূর হয়েছে। সংকট না থাকায় দামও সহনীয় থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন কোরবানিদাতারা। তবে বেপারিরা বলেছেন, বাজারে ‘খুঁটি বাণিজ্যে’র প্রভাবে তাদের গরুর দাম কিছুটা বাড়তি রাখতে হয়।জানা গেছে, কোরবানির পশুর হাটগুলোতে ইজারাদারদের পক্ষ থেকে খুঁট (ব্যবসায়ীদের ভাষায় খাইন। আকারভেদে এসব খাইনে ১০ থেকে ২০টি গরু রাখা যায়) স্থাপন করা হয়। নিয়ম হচ্ছে ইজারাদারগণ হাসিলের অর্থ আদায় করতে পারবেন। কিন্তু তারা খুঁটির মূল্যও নেন। তাই বাড়তি খরচ মেটাতে পশুর দাম বাড়িয়ে দিতে বাধ্য হন বলে জানান বেপারিরা। অর্থাৎ মূল দামের সাথে অতিরিক্ত খরচের লাগাম টেনে ধরতে বাড়ানো হয় গরুর মূল্য। আর এর মাশুল গুনতে হয় ক্রেতাদের।খুঁটির বিনিময়ে টাকা আদায় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাগরিকা পশুর হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম বলেন, সাগারিকা যে মূল বাজার সেখানে কোনো খুঁটি বাণিজ্য হয় না। আমরা কেবল হাসিল আদায় করি। আশেপাশে অনেক মাঠেও গরু বিক্রি হয়। সেখানে যারা মাঠ ভাড়া নেয় তারা ত্রিপল, পানি এবং লাইটের ব্যবস্থা করেন। এজন্য হয়তো কিছু খরচ নিতে পারে।গতকাল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লাহ, নাটোরসহ অন্যান্য এলাকা থেকে গরু এনেছেন বেপারিরা। আছে চট্টগ্রামের হাটহাজারী, পটিয়া, আনোয়ারা ও বাঁশখালী থেকে নিয়ে আসা গরুও। স্থানীয় বিভিন্ন খামারে হৃষ্টপুষ্টকৃত প্রচুর গরুও আনা হয়েছে বিক্রির জন্য।সাগরিকা পশুর হাটের বেপারি নূর হোসেন জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ২০টি গরু নিয়ে এসেছেন। দুই লাখ টাকা থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা দামের গরু আছে সেখানে। তবে এখনো একটিও বিক্রি হয়নি।কর্ণফুলী পশুর বাজারের ইজারাদার সাইফুল আলম বলেন, প্রায় ৫০০ ট্রাক গরু এসেছে। আরো প্রচুর গরু আসবে। কাল–পরশু (আজ এবং আগামীকাল) বেশি আসবে।দবিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে বলেন, এখনো তেমন হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে আশা করছি। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার চট্টগ্রামে কোরবানি পশুর সম্ভাব্য চাহিদা রয়েছে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬৫টি। এর বিপরীতে স্থানীয় খামারে হৃষ্টপুষ্ট করা হয় বা উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ ৫২ হাজার ৩৫৯টি। অর্থাৎ চাহিদার বিপরীতে স্থানীয় উৎপাদন অনুসারে সংকট আছে ৩৩ হাজার ৪০৬ টি কোরবানি পশুর। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে গরু আসায় সে সংকট এখন নেই।আরো দুটি পশুর হাট বসছে নগরে :এদিকে নগরে আরো দুটি অস্থায়ী হাট বসিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। ফলে নগরে এখন অস্থায়ী হাটের সংখ্যা নয়–এ উন্নীত হয়েছে। এর সঙ্গে আছে তিনটি স্থায়ী হাট। অর্থাৎ নগরে ১১টি স্থায়ী–অস্থায়ী পশুর হাটে চলছে বেচাকেনা। এছাড়া চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতে বসেছে আরো ২৫৭টি পশুর হাট। সবমিলিয়ে নগরসহ চট্টগ্রামে ২৪৮টি পশুর হাট বসেছে। এর মধ্যে অস্থায়ী হাট ১৭৬টি।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ জুন নগরে নতুন করে তিনটি অস্থায়ী হাট বসানোর অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসনে চিঠি দেয় চসিকের রাজস্ব বিভাগ। এর মধ্যে দুটি হাট বসানোর জন্য ৯ জুন চসিককে অনুমতি দেয়া হয়। শেষ মুহূর্তে অনুমতি পাওয়ায় বাজার দুটিতে ইজারাদার নিয়োগ দেয়া হয়নি। খাস কালেকশনে মাধ্যমে বাজার দুটি থেকে হাসিল আদায় করা হবে বলে জানিয়েছেন চসিকের স্টেট অফিসার রেজাউল করিম।নতুন করে বসা হাট দুটি হচ্ছে– মধ্যম হালিশহর মুনির নগর আনন্দ বাজার সংলগ্ন রিং রোডের পাশে খালি জায়গা এবং মোহরা ওয়ার্ডের জান আলী হাট রেল স্টেশন সংলগ্ন রেলওয়ের পরিত্যক্ত খালি জায়গা। নগরের অন্যান্য অস্থায়ী হাটগুলো হচ্ছে– কর্ণফুলী পশুর বাজার (নূর নগর হাউজিং এস্টেট অথবা বহাদ্দারহাট এক কিলোমিটার হতে শাহ আমানত ব্রিজের উত্তর পাশ পর্যন্ত), ৪১নং ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের খালি মাঠ, ৪০নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ ও একই ওয়ার্ডের মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ, ২৬ নং ওয়ার্ডের বড়পোল সংলগ্ন গোডাউনের পরিত্যক্ত মাঠ, ৩নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের ওয়াজেদিয়া মোড় এবং ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের আউটার রিং রোডস্থ সিডিএ বালুর মাঠ। এছাড়া স্থায়ী তিনটি হাট হচ্ছে– সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার।

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin
Share on print

আরও পড়ুন