৩০শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

গঙ্গাচড়ায় মহানবীকে নিয়ে কটূক্তির জেরে ভাঙচুরকৃত বাড়িঘর সরকারিভাবে সংস্কার করে দেওয়া হলো

গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি:
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর কটূক্তিমূলক পোস্ট দেওয়ার জেরে উত্তেজিত জনতা সনাতন ধর্মের ১৫ টি পরিবারের বাড়িঘর ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি শান্ত করতে দ্রুত সেখানে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনীর উদ্ধর্তন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়ে সবার সাথে কথা বলেন এবং যে অপরাধী তার আইন অনুযায়ী বিচার হবে বলে জানান। তাছাড়া যারা অপরাধ করবে তাদের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন ও বাড়িঘর মেরামত করার প্রতিশ্রুতি দেন। এছাড়া বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী আন্দোলনসহ অন্যান্য দলের নেতৃবৃন্দ যেয়ে সার্বক্ষনিক তদারকি করেন। এরপরও আতঙ্কে কিছু পরিবার তাদের আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেয়। এদিকে সরকারিভাবে গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রশাসন থেকে মঙ্গলবার সকাল থেকে টিন, বাঁশ, কাট ও লেবার দিয়ে ভাঙচুরকৃত পরিবারের বাড়িঘর সংস্কার করে দিচ্ছে। এছাড়া যাদের টিউবওয়েল নষ্ট হয়েছে তাদের টিউবওয়েল স্থাপন করে দেওয়া হচ্ছে। দেওয়া রান্নার চুলা। গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদ হাসান মৃধা উপস্থিত থেকে মেরামত কাজের তদারকি করছেন। এ সময় তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ২০ বান্ডিল টেউটিন দিয়ে মেরামতের কাজ শুরু করেছি। লাগলে আরো দেওয়া হবে। দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন খাবার সামগ্রী। আজকের (মঙ্গলবার) সন্ধ্যার মধ্যে মেরামত কাজ শেষ হবে বলে জানান। আরো উপস্থিত ছিলেন পিআইও সজীবুল করিম। অপরদিকে জেলা বিএনপির উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে শাড়ি,লুঙ্গি, জামাকাপড় ও খাবার সহায়তা দেওয়া হয়। জেলা বিএনপির আহবায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান, উপজেলা বিএনপির সভাপতি চাঁদ সরকার, সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলীসহ জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য যে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কটূক্তি করে ফেসবুকে পোষ্ট দেয় বেতগাড়ী ইউনিয়নের আলদাদপুর ছয়আনি এলাকার বাসিন্দা সুজন কুমারের ছেলে রঞ্জন রায়। এনিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝর উঠলে পুলিশ রঞ্জন রায় (১৭) কে শনিবার রাতে বেতগাড়ী এলাকা থেকে আটক করে। রঞ্জন রায় রংপুরের একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তার বিরুদ্ধে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা দায়ের পুর্বক আদালতের মাধ্যমে শিশু পূর্ণবাসন কেন্দ্রে পাঠায়। তবে উত্তেজিত জনতা ক্ষীপ্ত হয়ে ওই রাতেই রঞ্জন রায়ের বাড়ি মনে করে তার পাশের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি শান্ত করে। এর পরের দিন রোববার রঞ্জন রায়ের ফাঁসির দাবিতে কিশোরগঞ্জ উপজেলার সিংগের গাড়ী এলাকার জনতা মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে আবারও কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় সেনাবাহিনী ও পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয় এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ পরিস্থিতি শান্ত করে। অপরদিকে গঙ্গাচড়া উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বলেন, আলদাদপুর এলাকার পার্শ্ববর্তী কিশোর উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের সিংগের গাড়ী এলাকা। এই সিংগের গাড়ী লোকজন এসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। নেতৃবৃন্দ মনে করেন এটা পরিকল্পিত ভাবে করা হয়েছে। অন্যদিকে প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের প্রচেষ্টায় বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে এবং সনাতন ধর্মের লোকজন বাড়িতে থেকে মেরামতের কাজে সহযোগিতা করছে।

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin
Share on print

আরও পড়ুন