৫ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শৃঙ্খলাভঙ্গে জিরো টলারেন্স ঘোষণা বিএনপির

ঢাকা অফিসঃ

শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে শোকজ করা হয় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের মতো নেতাদেরও। বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম, যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্নার বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগের খবর প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে।এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জে রপ্তানিমুখী পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফকির গ্রুপের কাছে সুবিধা দাবির অভিযোগ মেলে নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। বায়রা ভবনে ভাঙচুরের ঘটনায় আবু আশফাক, শান্তিনগরের ইস্টার্ন প্লাস মার্কেটের কমিটি দখল; ঢাকা ও ফেনীতে চাঁদাবাজির ঘটনায় রফিকুল আলম এবং আবদুল মোনায়েমের বিরুদ্ধে পরিবহন ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগ ওঠে।হাসিনার পতনের পরপরই মতিঝিলে ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় দখল নিতে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় ইসলামী ব্যাংকের অন্তত ছয় কর্মী গুলিবিদ্ধ হন। সেসময় ঘটনাটিতে বিতর্কিত গ্রুপ এস আলমের পক্ষে ভূমিকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে যুবদলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম ওরফে নয়নের বিরুদ্ধে।ফরিদপুরের নগরকান্দায় বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে কবির ভূঁইয়া নামে এক ব্যক্তি নিহত। এ ঘটনার পেছনের কারণ ছিল বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের অনুসারীদের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ। পরে শামা ও বাবুলের দলীয় পদ স্থগিত করে দল।ময়মনসিংহের ভালুকায় ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করায় দক্ষিণ জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক ও ভালুকা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে দল থেকে তার বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়।বরিশাল নগরের ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকায় বিরোধ, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে পুকুর দখল ও ট্রাক দিয়ে বালু এনে সেটি ভরাটের অভিযোগ ওঠে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহানের (শিরিন) বিরুদ্ধে। পরে তার পদ স্থগিত করা হয়। যদিও বিলকিস দাবি করেছেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।এ ছাড়া বাগেরহাটে দলের কেন্দ্রীয় নেতা শামীমুর রহমান শামীম, কয়রা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন বাবুল, পাইকগাছা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক, তেরখাদা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বাবু মোল্লা, সদস্য ফেরদৌস মেম্বার, গাউস মোল্লা ও রবিউল ইসলাম লাকু, ফুলতলায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ আবুল বাশার ও সদস্য সচিব মনির হাসান টিটো, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা সভাপতি রুহুল আমিন দুলাল, আগৈলঝাড়ার ছাত্রদলের আহ্বায়ক মফিদুল মোল্লা, মেহেন্দীগঞ্জ ছাত্রদলের সদস্য সচিব জুবায়ের মাহমুদ, জেলা ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মাহমুদ হাসান, সুনামগঞ্জ তাহিরপুরের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন, সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহপরান, মৌলভীবাজার যুবদল সভাপতি জাকির হোসেন উজ্জল, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হাশিম, বগুড়ার ১৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সাজেদুর রহমান সাজু, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বিএনপি নেতা এনামুল হক সুমন, জেলা বিএনপির সহকোষাধ্যক্ষ আব্দুল জলিল বাকি, নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দাউদার মাহমুদ, বদলগাছীর উপজেলা বিএনপি নেতা বেলাল হোসেন এবং চট্টগ্রাম বিভাগে বিএনপির ১০ সাংগঠনিক জেলায় দুই শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় হাইকমান্ড।

বিএনপির একটি সূত্র বলেছে, চাঁদাবাজি, দখল, হুমকি, দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দলের ভাবমূর্তি রক্ষা ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কঠোর অবস্থানে থাকবে দলটি। অবশ্য কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর সেটি প্রমাণিত না হলে ওই নেতা বা কর্মীর শাস্তি বাতিল হবে। এক্ষেত্রে যাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের প্রমাণ নেই, কিন্তু প্রাথমিকভাবে তাকে বহিষ্কার বা পদ স্থগিত করা হয়েছিল সেগুলো ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শৃঙ্খলা রক্ষায় বিএনপির অবস্থান সাধুবাদযোগ্য। কারণ এহেন সব অভিযোগের পরও হাইকমান্ড যদি কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে এসব বিষয় দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে। কারণ এরই মধ্যে যেসব কর্মকাণ্ড ঘটেছে, তাতে ১৬ বছর ধরে নির্যাতনের শিকার বিএনপির নেতা-কর্মীরাই উল্টো জনতার প্রশ্নের মুখে পড়ছেন। এর প্রভাব পড়তে পারে ব্যালট বাক্সে।যাদের বিষয়ে অভিযোগ, মিলছে তাদের ক্ষেত্রে বিএনপি জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করছে। শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটিই নিশ্চিত হওয়া গেছে। নেতারা বলেছেন, দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা নিজস্ব সিদ্ধান্ত-স্বার্থ নিয়ে কাজ করবেন, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে বহিষ্কার করা হবে। কোনো অপরাধের জন্য ছাড় দেওয়া হবে না।নেতারা এও বলছেন, অভ্যুত্থানের আগে বিএনপিকে নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা ছিল। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপসহীন আদর্শ ধরে রেখে গত ১৬ বছর পার করেছে দল। সেদিক থেকে দলের ভেতরে-বাইরে কারও কোনো অপরাধের বিষয়ে আপস হবে না।বিষয়গুলো নিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিরুদ্ধে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে দলের পক্ষ থেকে। তবে নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ অনেক ক্ষেত্রেই অতিরঞ্জিত। যেসব ঘটনায় সত্যতা পাওয়া গেছে, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin
Share on print

আরও পড়ুন