৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কালীগঞ্জে রোহিঙ্গাসহ গ্রেফতার-৪

ইতালির কথা বলে মিয়ানমারে বন্দি করে নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়

মোঃ মুক্তাদির হোসেনঃ

ইতালিতে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে গাজীপুরের কালীগঞ্জের আরিফ হোসেনকে (৪৫) ফাঁদে ফেলে মিয়ানমারে নিয়ে বন্দি করে ও নির্যাতন চালিয়ে কয়েক ধাপে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে মানবপাচার চক্রের সদস্যরা। চাঞ্চল্যকর ঘটনায় এক রোহিঙ্গাসহ মানবপাচার চক্রের চার সদস্যকে কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার করেছে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ। বন্দি আরিফ হোসেন কালীগঞ্জ উপজেলাধীন তুমলিয়া ইউনিয়নের চুয়ারিয়াখোলা এলাকার জয়নাল আবেদীনের ছেলে।
পুলিশ ও বন্দির স্বজনরা জানায়, উপজেলার চুয়ারিয়াখোলা গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে আরিফ হোসেন দুই বছর আগে মালয়েশিয়ায় কর্মরত থাকা অবস্থায় দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের মাধ্যমে কক্সবাজারের রামুর পশ্চিম সিকদার পাড়ার কামাল উদ্দিনের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩০) এবং পূর্ব কলাতলির মীর কাশেমের ছেলে মোস্তাক আহমেদসহ অজ্ঞাত ৩-৪ জনের সঙ্গে পরিচয় হয়। সে সময় তারা বিদেশে লোক পাঠানোর ব্যবসা করে বলে জানায়। ২০২৩ সালে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে আসেন আরিফ হোসেন। এরপর তাকে ইতালি পাঠানোর প্রলোভন দেখায় মামুন ও মোস্তাক। এক পর্যায়ে ছয় লাখ টাকায় ইতালি যাওয়ার জন্য ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তাদের মধ্যে চুক্তি হয়। তারপর ১১ ডিসেম্বর আবদুল্লাহ আল মামুনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১ লাখ টাকা এবং ১৭ ডিসেম্বর আরও ১ লাখ টাকা পাঠানো হয়। পাশাপাশি নগদ আরও ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এরপর তারা আরিফকে প্রথমে মিয়ানমারে নিয়ে পরে ইতালি পাঠানোর কথা বলে ১১ ডিসেম্বর বাড়ী থেকে নিয়ে যায়। মিয়ানমারে নেওয়ার পর তারা আরিফ হোসেনকে বন্দি করে নির্যাতন করতে থাকে। পরবর্তীতে অপহরণকারীরা অজ্ঞাত মোবাইল নম্বর থেকে কল দিয়ে আরিফের মাধ্যমেই তার পরিবারকে জানায় যে, ১ লাখ টাকা পাঠালে তাকে মুক্তি দেওয়া হবে। এরপর ১ জানুয়ারী মামুনের ইসলামী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ১ লাখ টাকা পাঠানো হয়। কিন্তু তারা আরিফকে মুক্তি দেয়নি। এরপর আরো ৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে চক্রের সদস্যরা। টাকা না দিলে আরিফকে হত্যার হুমকি দেয় তারা। পরে ৫ জানুয়ারী তাদের দেওয়া একাধিক বিকাশ নম্বরে ৪ লাখ টাকা পাঠানো হয়। কিন্তু টাকা পাওয়ার পর অভিযুক্তরা তাদের সব মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখে। একপর্যায়ে ১৮ জানুয়ারী আরিফের স্ত্রী সুলতানা বেগম সার্বিক বিষয় উল্লেখ করে প্রথমে কালীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর: ৯০৬) করেন। এরপর ২৬ জানুয়ারী ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন-২০১২’ এর ৭/৮/১০ (১) ধারায় প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে নিয়ে আটক করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে কালীগঞ্জ থানায় ৩৩(২)২৫ নং মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, এ ঘটনায় জড়িতরা আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। তদন্তের একপর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় প্রথমে জানা যায়, আসামি মোস্তাক কক্সবাজারে অবস্থান করছে। পরে কক্সবাজারে অভিযান চালিয়ে ২০ তারিখে মোস্তাককে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে মানব পাচারকারী চক্রের আরও তিন সদস্যকে কক্সবাজার ও টেকনাফ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলাউদ্দিন বলেন, “চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় এক রোহিঙ্গাসহ আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।”

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin
Share on print

আরও পড়ুন