৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কমলগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ছয়চিরি দিঘীর পাড়ে চড়ক পূজা ও মেলা শুরু সোমবার

জায়েদ আহমেদ মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের ছয়চিরী দিঘীর পারে সোমবার (১৪ এপ্রিল) ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা ও মেলা শুরু হচ্ছে। দুইশত বছরের অধিক সময় ধরে অনুষ্ঠিত এ চড়ক পূজাকে কেন্দ্র করে ছয়চিরিসহ আশেপাশের এলাকার মানুষের মধ্যে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। ২ দিনব্যাপী এ চড়ক পূজা ও মেলা শেষ হবে ১৫ এপ্রিল মঙ্গলবার। ঐতিহ্যবাহী এই চড়ক উৎসব দেখতে দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামবে। ১৩ এপ্রিল রোববার রাতে কালীপূজা ও অগ্নিকুন্ডে বাদ্যযন্ত্রের ধ্বনি নৃত্যগীতিসহ শিবকালী নৃত্য অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। হিন্দু ধর্মীয় পঞ্জিকা মতে প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তি দিন এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে আয়োজকরা জানান।জানা যায়, চড়ক পূজা শুরুর ১০/১২ দিন আগে থেকে বিভিন্ন এলাকার পূজারীদের মধ্যে ৪০/৫০ জন সন্ন্যাস ধর্মে দীক্ষিত হয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিব-গৌরীসহ নৃত্যগীত সহকারে ভিক্ষায় অংশ নেন। এ কদিন তারা পবিত্রতার সহিত সন্যাস ব্রত পালন করেন। এসময় তার নিরামিষ ভোজনসহ সারাদিন উপবাস পালন করেন। চড়ক পূজার ২ দিন আগে পূজারীরা শ্মশানে গিয়ে পূজা অর্চনা করেন ও শেষে গৌরীর বিয়ে, গৌরী নাচ ও বিভিন্ন গান গেয়ে এবং ঢাকের বাজনায় সরগরম করেন গোটা এলাকা।এসময় দর্শনার্থীরা জয়ধ্বনি এবং নারীরা উলুধ্বনি দিতে থাকেন। জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে ‘কালীনাচ’ এবং তান্ত্রিক মন্ত্র দিয়ে ৭টি বলিছেদ (লম্বা দা) এর উপর শিব শয্যা সবার কাছে খুব আকর্ষণীয়।১৪ এপ্রিল সোমবার দুপুর থেকে নারী পুরুষ দর্শনার্থীর বিশাল সমাগম ঘটবে বলে আশা করছেন চড়কপূজা উদযাপন কমিটি। ১৫ এপ্রিল মঙ্গলবার ফের চড়ক পূজা অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিন দেবতার পূজা অর্চনা করা হবে। ঐতিহ্যবাহী ছয়চিরি দিঘীর চার পাড়ের মধ্যে দিঘীর পূর্বপাড়ে ১টি, উত্তর পাড়ে ১টি এবং দক্ষিণ পাড়ে ২টি চড়ক গাছ স্থাপন করে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।তান্ত্রিক মন্ত্রের ধারা বিভিন্ন অলৌকিক ধর্মীয় কর্মসূচী উপভোগ করার জন্য প্রতি বছরের মত এবারও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে দর্শনার্থীর উপস্থিতি ঘটবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা। চড়ক পূজা উপলক্ষে এক বিশাল মেলা বসবে। মেলায় গ্রামীণ ঐতিহ্যের বিভিন্ন রকমারী জিনিসপত্রের সয়লাব থাকবে।চড়ক পূজা ও মেলা পরিচালনা কমিটি প্রতি বছরের মতো এবারও মেলা সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি নিয়েছেন। যুগ যুগ ধরে এ চড়ক উৎসব এ অঞ্চলের হিন্দুদের বেশ নাড়া দিয়ে আসছে। বাংলা চৈত্র মাসের শেষ দিন ও ১লা বৈশাখ বসে মেলা। শেষ চৈত্রের গোধুলীলগ্নে চড়ক গাছ মাটিতে পূঁতে ঘোরানো হয়। এর আগে ভক্ত ও পূজারীরা চড়ক গাছে ফুল, দুধ ও চিনি দিয়ে পূজা দেয়।চড়কপূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অনিরুদ্ধ প্রসাদ রায় চৌধুরী জানান, ইতিমধ্যে চড়কপূজা অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও রহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ এর পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পূজা ও মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।কমলগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ বলেন, ঐতিহ্যবাহী ছয়চিরি দিঘীর পারে চড়ক পূজা ও মেলা সিলেট বিভাগের মধ্যে এতবড় আয়োজন আর আমার জানামতে নেই। এখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।৬কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) শামীম আকনজী জানান, চড়ক পূজা ও মেলা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করবে।কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, চড়ক পূজা ও মেলায় যাতে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin
Share on print

আরও পড়ুন