৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বাংলাদেশকে ভুটান ও ভারতের স্বীকৃতি

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের দিন যতই যেতে থাকে রণাঙ্গনের অবস্থা ততই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পাকিস্তানিদের পরাজয় সুনিশ্চিত করতে সর্বশক্তি দিয়ে এগিয়ে চলে বাংলার দামাল ছেলেরা। দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানিরা। তাদের মনোবল তলানিতে ঠেকে। পাকিস্তানি অনেক সৈন্য পালাতে শুরু করে।১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বরও ছিল সোমবার। এদিন মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে যুক্ত হয় আরেক মাইলফলক। এদিন বাংলাদেশকে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশ ভুটান ও ভারত স্বীকৃতি দেয়। এটা পাকিস্তানিদের জন্য অনেকটা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়ায়।ভারতের স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’তে ঘোষণা করা হয়-বাংলাদেশকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ভারত। তবে ইতিহাস বলে ভারতের কয়েক ঘণ্টা আগে তারবার্তার মাধ্যমে ভুটান প্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।ভারতের পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের প্রস্তাব উত্থাপন করে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, বাংলাদেশের সব মানুষের ঐক্যবদ্ধ বিদ্রোহ এবং সেই সংগ্রামের সাফল্য এটা ক্রমান্বয়ে স্পষ্ট করে তুলেছে যে, তথাকথিত মাতৃরাষ্ট্র পাকিস্তান বাংলাদেশের মানুষকে স্বীয় নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে আনতে সম্পূর্ণ অসমর্থ।ইন্দিরা গান্ধী বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে বিশাল বাধার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রাম এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করার পর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার বক্তব্য শেষ না হতেই ভারতের সংসদ সদস্যরা হর্ষধ্বনি আর ‘জয় বাংলাদেশ’ ধ্বনিতে ফেটে পড়েন।এর আগে ৪ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ যুগ্মভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি দেন।ভারতের স্বীকৃতি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। এ স্বীকৃতি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ‘ভারত-পাকিস্তান’ যুদ্ধের পরিচিতি থেকে মুক্তি দেয়। এ স্বীকৃতির ফলে মুক্তিযুদ্ধের গতি আরও বেগবান হয়। রণযুদ্ধের পাশাপাশি কূটনৈতিক যুদ্ধেও পরাজিত হতে থাকে পাকিস্তান। এদিন সকালে মুক্ত শেরপুর শহরে হেলিকপ্টারে পৌঁছান মিত্রবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লে. জে. অরোরা। হাজার হাজার মুক্তিবাহিনী ও মুক্তিপাগল মানুষ তাকে অভ্যর্থনা জানান।পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও মুক্ত করে এদিন বীরগঞ্জ ও খানসামার পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থানের দিকে এগিয়ে যায় মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী। এদিকে লাকসাম, আখাউড়া, চৌদ্দগ্রাম, হিলিতে মুক্তিবাহিনী দৃঢ় অবস্থান নেয়। পাকিস্তানি বাহিনী যুদ্ধে হেরে পিছু হটতে থাকে। রাতে আখাউড়া ও সিলেটের শমসেরনগর যৌথবাহিনীর অধিকারে আসে।এদিন যৌথবাহিনী হেঁটে ঝিনাইদহ পৌঁছে এবং শহরটি মুক্ত করে। ১৯৭১ সালের এ দিনে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত হয়। ১৯৭১ সালের এদিনে শত্রুমুক্ত হয় যশোর জেলা। এদিন বিকালে যশোর সেনানিবাস ছেড়ে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin
Share on print

আরও পড়ুন