
নিখিলেশ দাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধিঃ
ভিকটিম উদ্ধার ও আসামী গ্রেফতার অভিযান:-
ভিকটিম- নয়ন দাস (২১), গত ১৬মার্চ ২০২৫ নাসিরনগর থানার ফান্দাউক বাজার থেকে অপহরণ হয়। অপহরণকারী চক্র সকলের অগোচরে একটি হায়েস গাড়ি করে ভিকটিমকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই ভিকটিমের পরিবার তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোজাখুজি করতে থাকে, তার পরিবার ভিকটিমকে না পেয়ে অবশেষে থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর থেকেই শুরু হয় পুলিশের নিবিড় তদন্ত। আমরা বিভিন্নভাবে ক্লু উদ্ধারের চেষ্টা করতে থাকি কিন্তু একদিন চলে গেলেও কোন ক্লু পাওয়া যাচ্ছিল না। ভিকটিম তার মোবাইলটি তার বন্ধুর কাছে রেখে যাওয়ায় তার লোকেশানও সনাক্ত করা যাচ্ছিল না। পরদিন সকালবেলা বিভিন্ন মিডিয়াতে ঘটনার বিষয়ে নিউজ প্রকাশিত হয়। সকলে মিলে তদন্তে নেমে যাই। নয়নের পরিবার জানায় রাতে নয়নের ফোনে কল করে আসামীরা ৫০,০০০/- টাকা বিকাশে দিতে বললে তার পরিবার আমাদেরকে না জানিয়ে দুইটি বিকাশ এজেন্ট নাম্বারে টাকা পাঠিয়ে দেয়। আসামীরা আরো দশ লক্ষ টাকা দাবী করে চাপ দিতে থাকে। আসামীদের ফোন নাম্বার ও বিকাশের সূত্র ধরে তাদের অবস্থান ধারনা করে শুরু হলো তদন্ত, এভাবেই ২য় দিন অতিবাহিত হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার জনাব এহতেশামুল হক মহোদয়ের নির্দেশে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক্রাইম এন্ড অপস জনাব ওবাইদুর রহমান ও অফিসার ইনচার্জ জনাব খাইরুল আলম সাহেবদের সার্বিক তত্বাবধানে ও সহযোগীতায় আমার নেতৃত্বে এস. আই কুদ্দুস, এ.এস.আই আল আমিন, কনষ্টেবল মান্নান ও ভিকটিমের কাজিন বিকাশকে নিয়ে একটা নোয়া গাড়ি নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়ে যাই, সেখান থেকে ডিবির এস.আই মনিস ও একজন ফোর্স সহ মোট ৬ জনের টিম নিয়ে ঢাকা মুখি রওনা করি। সেখানে পৌঁছে বিকাশের দোকানের সন্ধান করি ও এর মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে কোন ক্লু বা ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করতে পারিনি। আসামীদের অবস্থান বারবার পরিবর্তন করায় তাদের অবস্থান নির্নয় করা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। এরমাঝেই আসামী গ্রেফতারের জন্য একাধিক জায়গায় অভিযান করেও সঠিক লোকেশান না জানার দরুন কয়েকবার ব্যার্থ হচ্ছিলাম, তখন আমার টিম মেম্বারদের আরো উৎসাহিত করে ভোরের দিকে ৩য় দিনের অভিযান সমাপ্ত করলাম। পরদিন সকাল ১০ টায় পুলিশ সদর দপ্তরে গিয়ে সেখানে স্যারদের সাথে বিস্তারিত কথা বলে সহায়তা চাইলে সেখানের একটা টিম আমাদের প্রযুক্তির সহায়তা করতে বিভিন্নভাবে লেগে যায়। এরই মাঝে আসামীরা ভিকটিমকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে এর ভিডিও ধারনকরে আমাদের সাথে থাকা ভিকটিমের মোবাইলে পাঠাতে থাকে। আসামীদের সঠিক অবস্থান ও আসামী সনাক্ত করতে না পারায় এভাবে আমাদের ৪র্থ দিন শেষ হয়ে যায়। পরদিন সকালবেলা জানতে পারি আসামীরা কুমিল্লা যাচ্ছে, সেখানে ওদের পিছু নেই কিন্তু ওদের গমনের সময় আমাদের থেকে ১ ঘন্টার তফাত থাকায় ওদের নাগাল পাওয়া সম্ভবপর হয়ে উঠেনি। কুমিল্লায় ওদের লোকেশান স্থির না হওয়ায় সেখানকার অভিযান ব্যার্থ হয়। অপরদিকে ভিকটিমকে ওরা ঢাকায় রেখে যাওয়ায় একই সময়ে অভিযান পরিচালনা করার জন্য সহযোগী ডিবির একটি টিম ঢাকার উদ্দেশ্যে রএনা করে। কিছুক্ষণের ভিতর জানতে পারি আসামীরা আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করেছে, আমরাও ওদের পিছন পিছন ছুটতে থাকি কিন্তু দুরত্বের জন্য ওরা নাগালের বাইরে চলে যায়। শুরু হয় ভিন্ন পরিকল্পনা, একজন আসামী সনাক্ত করে ওর ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করলাম, এভাবেই দিন চলে যায়। রাত ২ টায় শুরু হয় মূল অভিযান, প্রথম টার্গেট ব্যার্থ হয়ে আমাদের সহযোগীতা করতে আসা থানার টিম আমাকে বিভিন্নভাবে নিরুৎসাহিত করতে থাকে কিন্তু আমিতো দমে যাওয়ার পাত্র না, প্রবল দৃঢ়তা ও অসীম ধৈর্যের সাথে আবারো পরিকল্পনা সাজিয়ে একটি সফল অভিযানের মাধ্যমে মূল আসামী সহ দুজনকে একটি বাসায় ঘুমন্ত অবস্থায় গ্রেফতার করি এবং এরই তথ্য মতে একটি পুরাতন ভবনের নীচতালার বাসার তালা ভেংগে ভিকটিমকে উদ্ধার করে আমরা সেহেরি খেতে যাই, ফজরের নামাযের পর পুলিশি জাল বিছিয়ে মূল পরিকল্পনাকারী ৩য় আসামীকে গ্রেফতার করি। এদের দেয়া তথ্য মতে অনেক কষ্টে অপহরণের কাজে ব্যবহৃত হায়েস গাড়িটি ও এর চালককে মুন্সীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে ৫ দিনের অভিযান সমাপ্ত করি এবং সকল আসামী ও ভিকটিম নয়নসহ থানায় ফিরে আসি। সকল আসামীরা তাদের অপরাধের বিবরণ বিজ্ঞ আদালতে স্বীকার করতে সম্মত হলে তাদের ফৌঃকাঃবিঃ১৬৪ ধারার জবানবন্দি সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করি। অবশেষে ভিকটিমকে তার বাবা মায়ের হাতে তুলে দেয়ার মাধ্যমে একটা সফল অভিযানের পরিসমাপ্তি ঘটে। এই অভিযানটি পরিচালনা করার জন্য মহান আল্লাহর রহমত না থাকলে কোনভাবেই সফল হতো না, সর্বোপরি আলহামদুলিল্লাহ। #কৃতজ্ঞতা জানাই ASI মহসিন ও আমার সাথের সকল টিম মেম্বারদের প্রতি যারা নিস্বার্থভাবে আমার প্রতিটি কমান্ড অতি ধৈর্য ও দক্ষতার সাথে পালন করে এই অভিযান সফল করেছেন।
