৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আজ লক্ষ্মীপূজা ও প্রবারণা পূর্ণিমা

বিপ্লব কান্তি নাথ :
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান লক্ষ্মীপূজা আজ শনিবার (২৮ অক্টোবর)। শারদীয় দুর্গোৎসব-পরবর্তী পূর্ণিমা তিথিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা লক্ষ্মীদেবীর পূজা করে থাকে।অপরদিকে পূর্ণিমার তিথি একই হওয়ায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রবারণা পূর্ণিমাও একই দিনে পালিত হবে।হিন্দু ধর্মীয় বিধান মতে, লক্ষ্মীদেবীকে বলা হয় ঐশ্বর্যের দেবী। শাস্ত্রমতে, আশ্বিনের পূর্ণিমা তিথিতে ধনসম্পদ, প্রাচুর্য, সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধির দেবী লক্ষ্মী বিষ্ণুলোক থেকে পৃথিবীতে নেমে আসেন পূজা গ্রহণ করতে। লক্ষ্মীদেবী সন্তুষ্ট থাকলে সংসারে অর্থকষ্ট থাকে না, বরং সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বাড়ে। শনিবার পূর্ণিমা তিথিতে লক্ষ্মীদেবীর বন্দনা করবেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম এই ধর্মীয় উৎসবটি কোজাগরি লক্ষ্মীপূজা নামেও পরিচিত।লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা। বিষ্ণু রাম ও কৃষ্ণ রূপে অবতার গ্রহণ করলে, লক্ষ্মী সীতা ও রাধা রূপে তাদের সঙ্গিনী হন। কোজাগরী পূর্ণিমা রাতে দেবী লক্ষ্মী ধনধান্যে ভরিয়ে দিতে ভক্তগৃহে আসেন। প্রাচীনকাল থেকেই রাজা-মহারাজা ও ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ গৃহস্থ অবধি সবাই দেবী লক্ষ্মীর পূজা দিয়ে আসছেন। লক্ষ্মীকে নিয়ে বাংলার জনসমাজে বিভিন্ন জনপ্রিয় গল্প প্রচলিত আছে। এই গল্পগুলো পাঁচালীর আকারে লক্ষ্মীপূজার দিন পাঠ করা হয়। একে লক্ষ্মীর পাঁচালী বলা হয়।লক্ষ্মীপূজার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো— সিঁদুর, ঘট, ধান, মাটি, আম্রপল্লব, ফুল, দুর্বা, তুলসীপাতা, হরীতকী, চন্দন, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য, আতপ চাল ও জল। লক্ষ্মীপূজায় মঙ্গলঘট, ধানের ছড়ার সঙ্গে গৃহস্থের আঙিনায় শোভা পায় চালের গুঁড়োর আলপনায় লক্ষ্মীর ছাপ। এ উপলক্ষে রমণীরা উপবাসব্রত পালন করেন।লক্ষ্মীপূজায় রাতে জাগরণ করা হয়। কোজাগরী অর্থাৎ কে জাগরী বা কে জেগে আছ।শাস্ত্রমতে, এই রাতে লক্ষ্মী সবার বাড়িতে যান। যে গৃহের দরজা বন্ধ থাকে ও গৃহস্থরা ঘুমিয়ে থাকেন, সেখান থেকে লক্ষ্মী ফিরে আসেন। এ কারণে এই লক্ষ্মীপূজাকে কোজাগরী বলা হয় এবং রাত জাগরণের নিয়ম রয়েছে। বাঙালি হিন্দুর ঘরে ঘরে দেবী লক্ষ্মীর পূজা হয়ে থাকে। গৃহস্থরা প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীর পূজা করেন।
অন্যদিকে,আজ শনিবার (২৮ অক্টোবর) বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা। ‘প্রবারণা’ শব্দটি সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে। ব্যাপক অর্থে প্রবারণা বলতে অসত্য ও অকুশল কর্মকে বর্জন করে সত্য ও কুশল কর্মকে বরণ করা। প্রবারণা পূর্ণিমার অপর নাম ‘আশ্বিনী পূর্ণিমা’। প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাব্রত পালনের সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও, এই পূর্ণিমা তিথি সব বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর কাছে তাৎপর্যপূর্ণ। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত এই তিন মাস বর্ষাব্রত পালন করেন।
এই তিন মাস তারা বিহারে অবস্থান করেন। যেহেতু একসঙ্গে বসবাস করতে গেলে পরস্পরের মধ্যে ভুলভ্রান্তি হওয়া স্বাভাবিক, সেহেতু ভিক্ষুদের মধ্যেও ভুলভ্রান্তি হতে পারে। তাই বর্ষাব্রত পালন শেষে ভিক্ষুরা আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথিতে প্রবারণা করেন। অর্থাৎ এই দিনে ভিক্ষুরা পরস্পরের কাছে তাদের পূর্বকৃত ভুলভ্রান্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন, যার মাধ্যমে বুদ্ধের শাসনের উৎকর্ষ সাধিত হয় এবং ভিক্ষুসংঘের কল্যাণ সাধিত হয়।ভিক্ষুসংঘের বর্ষাবাস পরিসমাপ্তির এই পবিত্র দিনকে কেন্দ্র করেই প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করা হয়। প্রবারণা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জন্য একটি আবশ্যক বিধিবদ্ধ নিয়ম।প্রবারণা পূর্ণিমার পরদিন থেকে পরবর্তী এক মাস অর্থাৎ কার্তিকী পূর্ণিমা পর্যন্ত কঠিন চীবর দান সম্পন্ন হয়ে থাকে। বর্ষাবাস সমাপ্তকারী ভিক্ষুরা কঠিন চীবর গ্রহণ করেন। প্রবারণা পূর্ণিমার পবিত্র দিনে বৌদ্ধ উপাসক-উপাসিকারা পরিষ্কার পোশাকে বৌদ্ধ বিহারে সমবেত হয়ে বুদ্ধপূজা করেন, ভিক্ষুদের আহার্য দান করেন, পঞ্চশীল, অষ্টশীল গ্রহণ করেন এবং বিকালে ধর্মীয় সভার আয়োজন করা হয়।এই পবিত্র দিনের আকর্ষণীয় একটি দিক হলো সন্ধ্যায় ফানুস ওড়ানোর উৎসব। সর্বস্তরের মানুষ ফানুস ওড়ানো উপভোগ করে। ফানুস মূলত ওড়ানো হয় বুদ্ধের কেশ ধাতুর প্রতি পূজা ও সম্মান প্রদর্শনার্থে।তবে আজের এই দিনে সনাতন ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনা জগতের সকল প্রাণীর কল্যাণকর ও সুন্দর সবুজ শ্যামল পৃথিবীতে সকলের সৌহাদ্য পূর্ণ পথচলা।

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin
Share on print

আরও পড়ুন