
স্পোর্টস ডেস্কঃ
ভারতের ক্রিকেটকে বিষাদে ভাসিয়ে আজ অন্যলোকে পাড়ি জমিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক বিষেণ সিং বেদী। ৭৭ বছর বয়সী বেদী গত বছর দুয়েক ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন, কয়েকবার অস্ত্রোপচারের টেবিলেও যেতে হয়েছে – যার সর্বশেষটি ছিল গত মাসে হাঁটুতে। গত মাসেই ৭৭তম জন্মদিন পালন করা বেদী আজ দিল্লিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।ক্রিকেট মাঠে তাঁর কীর্তিকে শিরোপায় রূপ দেওয়ার মতো অবস্থায় তখন ছিল না ভারতের দলটা। তবে ১৯৬৭ থেকে ১২ বছরে ভারতের হয়ে যে ৬৭ টেস্ট আর ১০টি ওয়ানডে খেলেছেন বিষেণ সিং, সেখানে নিজের জাত চিনিয়েছেন আলাদা করে। সর্বকালের সেরা বাঁহাতি স্পিনারদের তালিকায় তাঁর নাম আসে, তাঁর বোলিং অ্যাকশনকে মানা হতো মসৃণতম অ্যাকশনের একটি – হয়তো সে কারণেই মুত্তিয়া মুরালিধরন, এমনকি হরভজন সিংদের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে তাঁর বিরক্তি ছিল অনেক। ক্রিকেটের সেরা বোলারদের মতো, একই জায়গায় লম্বা সময় ধরে বল ফেলে সন্তর্পনে করা ভ্যারিয়েশনের কারণেই বেদী হয়ে উঠেছিলেন ভয়ংকর। খেলা যখন ছাড়ছেন, তখন ২৮.৭১ গড়ে ২৬৬ উইকেট নিয়ে টেস্টে ভারতের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিও ছিলেন তিনি।সত্তরের দশকে বেদীর সঙ্গে আনঅর্থোডক্স লেগস্পিনার ভগবত চন্দ্রশেখর এবং দুই অফস্পিনার এরাপল্লি প্রসন্ন ও শ্রিনিবাস ভেঙ্কটরাঘবন মিলে ভারতের দলে যে অসাধারণ স্পিন চতুষ্টয় গড়েছিলেন, সেটা সে সময়ে ভারতের ক্রিকেটে দাপট দেখিয়েছে।
অধিনায়ক হিসেবেও বেদীর কিছু কীর্তি আছে। অস্ট্রেলিয়ায় ১৯৭৭-৭৮ সিরিজে বেদীর নেতৃত্বেই ভারতের দলটা পাঁচ টেস্টের সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দারুণ লড়েছে। শেষ পর্যন্ত ৩-২-এ হেরেছে, তবে মেলবোর্নে তৃতীয় ও সিডনিতে চতুর্থ টেস্টে জয় সে সময়ে অনেক বড় অর্জনই ছিল। ভারতের দল বিদেশের মাটিতে জিততে পেরেছে – এটাই তো অনেক!
অধিনায়ক হিসেবে কিছু বিতর্কিত মুহূর্তও ছিল বেদীর। তবে সেসব হয়তো তাঁর চরিত্রের স্পষ্টবাদীতার প্রতিফলন! ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৯৭৬ সালের সিরিজে ভারতের রেকর্ড রানতাড়ার পর চতুর্থ টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ চার পেসার নিয়ে আগ্রাসী বোলিং শুরু করে। বেদী প্রশ্ন তুলেছিলেন উইন্ডিজের বোলারদের ছোঁড়া বিমার নিয়ে। দুই ব্যাটসম্যান আহত হওয়ার পর প্রথম ইনিংস ঘোষণাও করে দেন। ১৯৭৮ সালের নভেম্বরে তিনি ম্যাচ ছেড়ে দেওয়া প্রথম অধিনায়কও বনে যান। সেটাও কোন ম্যাচে? চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে। ভারতের তখন জিততে ১৪ বলে ২৩ রান দরকার, হাতে ৮ উইকেট। এমন সময়ে সরফরাজ নওয়াজ টানা চারটি বাউন্সার করলেও আম্পায়ার ওয়াইড না ডাকায় ম্যাচ থেকে খেলোয়াড়দের উঠিয়ে নেন বেদী।
বল হাতে পারফরম্যান্সের পাশাপাশি এই স্পষ্টবাদী চরিত্রই ভারতের ক্রিকেটের বেদীতে বিষেণ সিংকে চিরস্থায়ী জায়গা এনে দিয়েছে।
