
গঙ্গাচড়া রংপুর প্রতিনিধি :
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রেসক্লাবের আয়োজনে গাজীপুরে প্রকাশ্যে সাংবাদিককে জবাই করে হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
৯ আগষ্ট সকালে গঙ্গাচড়া বাজার জিরোপয়েন্টে দৈনিক বাংলাদেশের কাগজ পত্রিকার গাজীপুরের স্টাপ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) কে জন সম্মুখে প্রকাশ্যে জবাই করে হত্যা এবং দৈনিক প্রতিদিনের আলো পত্রিকার সাংবাদিক আনোয়ার হোসেনকে অমানবিক নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদসভায় গঙ্গাচড়া উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দের এই কর্মসূচীকে সংহতি জানিয়ে প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজনৈতিক ,জনপ্রতিনিধি , শিক্ষক, সমাজসেবী ও পেশাজীবি সংগঠনের সর্বস্তরের সচেতন নাগরিক।মানববন্ধনের শুরুতে সাংবাদিক আফফান হোসেন আজমীর পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন।
প্রতিবাদ সভায় সাংবাদিক মাহফুজার রহমান মাহফুজ বলেন, একটি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হচ্ছে গণমাধ্যম। সেই গণমাধ্যমের চালিকাশক্তি হচ্ছে -সাংবাদিক। সেই সাংবাদিকেই যখন প্রকাশ্যে জন সম্মুখে, দিনের আলোয় জবাই করে হত্যা করা হচ্ছে, তখন নিরদ্বিধায় বলা যায়, এটি একটি ব্যার্থ রাষ্ট্রের পরিচয় বহন করে।

সাংবাদিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিক তুহিনকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, এটা কোন সভ্য সমাজের চিত্র হতে পারে না। আমরা গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে এর তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।অধ্যক্ষ মাওলানা রোকনুজ্জামান বলেন, সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনা জতির জন্য লজ্জার। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, আপনারা দ্রুত আসামীদের গ্রেফতার করে আইনের কাছে সোপর্দ করুন। অন্যথায় আপনারাও প্রশ্নবিদ্ধ হবেন।গজঘণ্টা ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান বকুল মিয়া বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের সার্বিক চিত্র তুলে। যদি সাংবাদিকরাই নিরাপত্তা হীনতায় হত্যার স্বীকার হয় তাহলে সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা কোথায়?
বড়বিল ইউপি চেয়ারম্যান এডভোকেট সামছুল হুদা বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের আয়না। আর সেই আয়না যদি ভেঙে যায়, তাহলে এই সমাজের বাস্তব চিত্র আমরা দেখব কিভাবে? তাই সাংবাদিক তুহিন হত্যার বিচার দ্রুত সময়ে নিশ্চিত করতে হবে। লক্ষ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, সাংবাদিকতা যেহেতু একটি নিরপেক্ষ পেশা। সাংবাদিকরা নিরপেক্ষভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে। তাই সাংবাদিককে হত্য ও নির্যাতন আমাদের জন্য লজ্জার।
সমাজসেবী ও বকসা বৃদ্ধাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা রেজাউল করিম বলেন, কোন হত্যাই আমাদের কাম্য নয়। সাংবাদিক তুহিন হত্যা কান্ড গোটা জাতিকে নাড়া দিয়েছে। এই হত্যা কান্ডে প্রমাণিত হয়েছে বর্তমান প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পরেছে। আমি সংবাদিক তুহিন হত্যার ধিক্কার জানাই এবং ন্যাক্কার হত্যাকান্ডের দ্রুত বিচারের দাবী জানাই। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গঙ্গাচড়া উপজেলা নায়েবে আমীর নায়েবুজ্জামান বলেন, আমি সাংবাদিকদের এই প্রতিবাদ সভায় সংহতি জানাই এবং সাংবাদিক বন্ধদের বলতে চাই, আপনারা দায়িত্বের জায়গা থেকে আপনাদের কাজ করে যাবেন। তাতে যদি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়,তাহলে জেনে রাখুন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আপনাদের সাথে আছে। উপজেলা বিএনপির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম চাঁন বলেন, দিনের আলোয় জনসম্মুখে সাংবাদিক তুহিনকে জবাই করে হত্যার ঘটনায় আমি হতভম্ব। এরা কারা, কোথা থেকে এত সাহস পেল? দেশে এমন ঘটনা নতুন নয়। প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ? দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থার গতি পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন।
গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর সদস্য ও রংপুর -১ এর মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী হানিফ খান সবজি বলেন, গণঅভ্যুত্থান হয়তো ঘটেছে কিন্তু বাংলাদেশের আকাশ থেকে দূর্ণীতি, অবিচার, অন্যায় জুলুম – নির্যাতনের কালো মেঘ এখনো রয়েছে। গাজীপুরের সাংবাদিক তুহিন হত্যা কান্ড তারই প্রতিচ্ছবি। যেখানে অন্যায়, অবিচার, সেখানেই রুখে দাঁড়াতে হবে। সাংবাদিক তুহিন হত্যা কান্ডের তীব্র নিন্দা জানাই।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রংপুর মহানগর সহকারী সেক্রেটারি ও রংপুর -১ আসনের মনোনীত প্রার্থী রায়হান সিরাজি মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, আমরা যখন সাংবাদিক তুহিনের হত্যার প্রতিবাদে গঙ্গাচড়ায় মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি, তখন হয়তো তার পরিবার নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। আমরা তার পরিবারকে সমবেদনা জানাই।হত্যা কান্ড হয়তো পাঁচ মিনিটে সংঘটিত হয়েছে কিন্তু এই হত্যার বিচার পাঁচ বছরেও হবে না, এটা আমাদের জুডিশিয়াল ব্যবস্থার বড় দূর্বলতা।রাজনৈতিক পরিচয়ের পাশাপাশি আমি একজন সাংবাদিক হিসেবে বলতে চাই, এই হত্যা কান্ডের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি তুহিনের পরিবারের ভার সরকারকেই বহন করতে হবে।গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব কমল কান্ত রায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমাদের তো এখনে মানববন্ধনের জন্য দাঁড়ানোর কথা নয়। আমরা সংবাদ কর্মী হিসেবে সংবাদ সংগ্রহের জন্য মাঠে ময়দানে ব্যস্ত থাকব। আমাদের কাজ সমাজিক কৃষ্টি কালচার, উন্নয়ন, দূর্ণীতি ও সামাজিক সব ধরণের অসংগতি তুলে ধরা কিন্তু এই কাজে যাদের স্বার্থে আঘাত লাগে তখনই এমন ঘটনা ঘটে। আমি এই হত্যা কান্ডের তীব্র নিন্দা জানাই।পরিশেষে গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রেসক্লাবের আহবায়ক আবদুল আলীম প্রামাণিক সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
