১৪ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

২৮ বছর ধরে নিজের টাকায় গাছ লাগান মৌলভীবাজারের চা শ্রমিক বিষ্ণু

বিজয় সরকার মৌলভীবাজারঃ

সময় সুযোগ পেলেই নিজের বাইসাইকেলের পেছনে চারা ও গাছ লাগানোর সরঞ্জাম নিয়ে এখানে সেখানে ছোটেন বিষ্ণু হাজরা (৪০)। রাস্তার ধার, ফাঁকা মাঠ, চা বাগানের আনাচকানাচে রোপণ করেন নানা ধরনের গাছ। এতেই তাঁর আনন্দ। এ কাজে নিজের পকেট থেকে টাকা খরচ করতে দ্বিধাবোধ করেন না তিনি। চা শ্রমিক পরিবারে জন্ম নেওয়া মানুষটি দারিদ্র্য উপেক্ষা করে বেছে নিয়েছেন পরিবেশ রক্ষার কাজ। ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি এ কাজ করে আসছেন।
বিষ্ণু হাজরা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা বাগানের বাসিন্দা। তিনি পেশায় চা শ্রমিক। চা বাগানে কাজের পাশাপাশি সেখানে ঝালমুড়িও বিক্রি করেন। তাঁর পরিবারে মা-বাবা, স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে।সম্প্রতি এক দুপুরে ভাড়াউড়া চা বাগানের দুর্গামন্দির প্রাঙ্গণে বিষ্ণুর সঙ্গে দেখা হয়। কয়েকজন তরুণ-যুবককে নিয়ে মন্দিরটির চারপাশে ছোট ছোট গর্ত করছিলেন তিনি। একপর্যায়ে সেখানে রোপণ করছেন জাম, নিম, বট আর কাঠগোলাপের চারা।আলাপকালে বিষ্ণু বলেন, ‘১৯৯৪ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে শহরের ভিক্টোরিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হই। আমাদের চা শ্রমিক পরিবারে অভাব অনটন লেগেই থাকত। তখন পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনিও করতাম। একদিন মাথায় এলো যদি কিছু গাছের চারা লাগাই, সেই চারা বড় হলে অনেক টাকায় বেচতে পারব, অর্থকষ্ট কমবে। ১৯৯৭ সালে আমি নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বৃক্ষ’ কবিতাটি পড়ি। সেই কবিতা থেকে বেশ অনুপ্রাণিত হই, গাছের অনেক উপকারিতার কথা জানতে পারি। তখন থেকে টিউশনির টাকার একটি অংশ দিয়ে টুকটাক গাছ লাগানো শুরু করি।’
কয়েকজন তরুণ-যুবককেও সম্পৃক্ত করেছেন বৃক্ষরোপণের কাজে গাছ লাগানোর পর সেগুলোর পরিচর্যার কাজও বিষ্ণু নিজে করেন। কারও জন্মদিন, মৃত্যুবার্ষিকী, বিয়ে বা কোনো অনুষ্ঠানে তিনি গাছের চারা উপহার দেন। তাঁর মনে গাছ ও পরিবেশের প্রতি ভালোবাসার বিষয়টি আরও পাকাপোক্ত হয় ২০১৪ সালের পর থেকে। ওই সময় থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি পত্রিকার হকার ছিলেন। তখন পত্রিকাগুলোর বিভিন্ন লেখা পড়তেন। পরিবেশ নিয়ে লেখাগুলো বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়ে পড়তেন।
বিষ্ণুর ভাষ্য, ‘ফেসবুকে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যার ছবি-ভিডিও দিয়ে অন্যদেরও গাছ লাগানোর জন্য অনুপ্রাণিত করি এখন। আমার গাছ লাগানো কার্যক্রম অনেক আগে থেকে হলেও ২০২০ সাল থেকে পুরোদমে গাছ লাগানোর কাজ শুরু করি। তখন ফেসবুকে আমার কার্যক্রম দেখে অনেকে আমার সঙ্গে যোগ দেন। অনেকেই আমাকে গাছের চারা কিনে দিয়ে সহযোগিতা করছেন। আমি উপার্জনের একটি অংশ গাছ লাগানোর জন্য ব্যয় করছি।’বিষ্ণুর মতে, অবাধে বৃক্ষনিধন, বন-জঙ্গল উজাড়, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, অপরিকল্পিত ময়লার ভাগাড়, প্লাস্টিক দূষণ, নদী দখল ও দূষণ আমাদের পরিবেশ নষ্ট করছে। এসব রক্ষায় বৃক্ষরোপণের বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণও করতে হবে।

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin
Share on print

আরও পড়ুন