৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সাড়ে ৫ কোটি টাকার বিল জালিয়াতি: ফেঁসে যাচ্ছেন তত্ত্বাবধায়ক

মাসুদ পারভেজঃ

আড়াইশ শয্যার চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার বিলে ব্যয় মঞ্জুরিপত্র ছিল না। সেটি জালিয়াতি করে জমা দেওয়া হয় বিল। জালিয়াতির এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। ডা. রাব্বিসহ পাঁচজনকে আসামি করে মামলার সুপারিশ করেছে দুদকের চট্টগ্রাম অফিস। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতাল এবং দুদকের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের (আইসিইউ) আটটি শয্যা, ভেন্টিলেটর ও কার্ডিয়াক পেশেন্ট মনিটরসহ প্রায় ১৫ কোটি টাকার চিকিৎসা যন্ত্রপাতি কেনে আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতাল। ঠিকাদার যন্ত্রপাতি সরবরাহের পর সেগুলো মানসম্মত না হওয়ায় স্থানীয় পর্যায়ে সমালোচনা তৈরি হলে কিছু যন্ত্রপাতি সংযোজন ছাড়াই দীর্ঘদিন হাসপাতালের গোডাউনে ফেলে রাখা হয়। এরমধ্যে ৮টি আইসিইউ বেড, ৮টি আইসিইউ ভেন্টিলেটর এবং একটি কার্ডিয়াক পেশেন্ট মনিটর। এসব যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে ঢাকার পল্লবীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজ।পরবর্তীসময়ে এসব যন্ত্রপাতি ক্রয়ে অনিয়ম অনুসন্ধানে দুর্নীতির সত্যতা পায় দুদক। যন্ত্রপাতি ক্রয়ে প্রায় ৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ওই সময়ের সিভিল সার্জন (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) ড. সরফরাজ খান চৌধুরী, হাসপাতালের তিন ডাক্তার এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চারজনসহ আটজনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর মামলা করে দুদক। মামলাটি বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন।এরপর ২০২০ সালের শুরুতে দেশে করোনা মহামারি শুরু হলে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালকে ১০০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড ঘোষণা করে স্বাস্থ্য বিভাগ। এসময় সারাদেশে আইসিইউ সংকটের মধ্যে ওই হাসপাতালের গোডাউনে পড়ে থাকা যন্ত্রপাতিগুলো জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের উদ্যোগ নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অনুমতি দেয়। পাশাপাশি ওই সময়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী (বর্তমানে শিক্ষামন্ত্রী) এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে সভাপতি করে গঠিত একটি কমিটি ২০২০ সালের ১৯ মে আলোচনার মাধ্যমে এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত দেন। যথারীতি এসব যন্ত্রপাতি জেনারেল হাসপাতালে সংযোজন করা হয়।এ সুযোগে এসব যন্ত্রপাতির বকেয়া থাকা ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিল দাবি করেন ঠিকাদার। ঠিকাদারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিলের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে ব্যয় মঞ্জুরি প্রদান করা হয়নি। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে উপ-পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগ দেন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। এর আগে তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের দায়িত্বে।এদিকে ২০২২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিল পরিশোধের জন্য ব্যয় মঞ্জুরিপত্র চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। তারপরও মন্ত্রণালয় পত্র প্রদান না করলে ২০২১-২২ অর্থবছরের মধ্যেই ঠিকাদারকে বিল পরিশোধে উদ্যোগী হয় জেনারেল হাসপাতাল। যথারীতি ২০২২ সালের ২৮ জুন বিলটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় হিসাবরক্ষণ অফিসে উপস্থাপন করা হয়। বিলের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয় একটি ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরিপত্র।মূলত বিলের সঙ্গে থাকা ব্যয় মঞ্জুরিপত্রটি বিভাগীয় হিসাবরক্ষণ অফিস ভুয়া দাবি করায় বিপত্তির সৃষ্টি হয়। বিষয়টি থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়। তবে সরকারি বিলে ডকুমেন্ট জালিয়াতির বিষয়টি দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী ৩০ জুন দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ লিখিত অভিযোগ দেন হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক।ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বিলের সঙ্গে যুক্ত ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরিপত্রটি যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী ঠিকাদার মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর মুন্সি ফারুক হোসেন, তাদের অফিস স্টাফ সাজ্জাদ হোসেন ও মুকিত মণ্ডল এবং হাসপাতালের হিসাবরক্ষক ফোরকান পরস্পর যোগসাজশে তৈরি করেছেন।এরপর দুদক প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে অভিযোগটি অনুসন্ধান করে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১। ওই কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক অভিযোগটি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে দুদকে অভিযোগকারী বাদী আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বিকেও আসামি করার সুপারিশ করা হয়।প্রতিবেদনে মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর মুন্সী ফররুখ হোসাইন ওরফে মুন্সি ফারুক, তার ভাই মুন্সি সাজ্জাদ হোসেন, তাদের অফিস স্টাফ মুকিত মণ্ডল, জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মোহাম্মদ ফোরকান এবং হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বির বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হয়ে এবং অন্যকে লাভবান করার অসৎ উদ্দেশ্যে ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরিপত্র সৃজনপূর্বক তা খাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে দণ্ডবিধির ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯, ৫১১ এবং ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর সুপারিশ করা হয়।প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মুন্সি ফারুকের সহোদর মুন্সি সাজ্জাদ হোসেন তার হোয়াটসঅ্যাপ মোবাইল নম্বর থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সুশীল কুমার পাল স্বাক্ষরিত চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসার, সেগুনবাগিচা বরাবর প্রেরিত একটি ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরিপত্র (স্মারক নং-৪৫.০০.০০০

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin
Share on print

আরও পড়ুন