
উত্তম কুমার সাহা যুক্তরাষ্ট্রঃ
গত ১০ই ডিসেম্বর, রোজ রবিবার, বিকেল ৪টায় নিউইয়র্কস্থ গুলশান ট্যারেসের হল রুমে প্রায় ৪০০ মানুষের উপস্থিতিতে ইউনাইডেট হিন্দুস অব ইউএসএ ইনক এর নব গঠিত কমিটির (দুই বছর মেয়াদী) অভিষেক অনুষ্ঠান সুসম্পন্ন হয় শ্রী সুশীল সিন্হা আহবায়ক, শ্রী উত্তম কুমার সাহা সদস্য সচিব সহ মোট ১২ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি সকলের সহযোগিতা নিয়ে প্রায় ১৫ দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই অভিষেক অনুষ্ঠান সুসম্পন্ন করেন। শ্রী ভজন সরকার (সভাপতি), শ্রী রামদাস ঘরামী (সাধারণ সম্পাদক)সহ ৭০ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী পরিষদ, স্বামী দেবপ্রিয়ানন্দ গিরি মহারাজ (চিফ বোর্ড অব এডভাইজার)সহ মোট ৯০ সদস্য বিশিষ্ট এডভাইজার কমিটি, ডা. প্রভাত দাস চেয়ারম্যান, শ্রী সুশীল সিনহা মেম্বার অফ সেক্রেটারি করে মোট ১০২ সদস্য বিশিষ্ট বোর্ড অব ডাইরেক্টর কমিটি ও শ্রী নিত্যানন্দ কিশোর দাস (চিফ বোর্ড অব ট্রাস্টি) গঠন করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শ্রী নিত্যানন্দ কিশোর দাস, স্বামী দেবপ্রিয়ানন্দ গিরি মহারাজ ও ভবতোষ মিত্রের নেতৃর্ত্বে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের চরণে প্রণাম নিবেদন করে শ্রীমত ভগবৎ গীতা পাঠ, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, আমেরিকা ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সুচনা করা হয়। ১৬ই ডিসেম্বর, বাংলাদেশের বিজয়ের মাস উপলক্ষ্যে সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।সংগঠনের সহসভাপতি ও নির্বাচন কমিশন অজিত চন্দ ও আশিস ভৌমিক নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যদের ভগবান শ্রী কৃষ্ণের চরণে প্রণাম রেখে শপথ বাক্য পাঠ সুসম্পন্ন করেন। ছয় ঘন্টাব্যাপী অনুষ্ঠানের শুরুতে অভিষেক উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক শ্রী সুশীল সিনহা , সদস্য সচিব উত্তম কুমার সাহা আলোচনার শুরুতে তাদের শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। সুশীল সিনহা তার বক্তব্যে বলেন, আজ এই অনুষ্ঠান সুসম্পন্ন করার জন্য আমাকে যে গুরু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, আমি সকলের সহযোগিতা নিয়ে তা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। আজকের এই আয়োজনের সফলতা আপনাদের ভুলত্রুটি যা হয়েছে ও সকল ব্যর্থতা আমার কাঁধে নিয়ে আপনাদের সাথে থেকে বাংলাদেশের সনাতনী হিন্দুদের অধিকার আদায়ের জন্য যা কিছু করণীয় আমার সাধ্যমত আমি করার চেষ্টা করবো।
সদস্য সচীব উত্তম সাহা তার বক্তৃতায় বলেন, প্রবাসে থেকে আজ আমাদের মাতৃর্ভূমিতে সনাতনী সম্প্রদায়ের মানুষের জীবন জীবিকা রক্ষার্থে তাদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করতে হচ্ছে, যা দুঃখজনক। ২০২১ সালে আমাদের বাংলাদেশের মন্দির, মন্ডপ, বিগ্রহ ভেঙ্গে চুড়মার করা হয়েছে। বিভিষিকাময় মানবেতর জীবন যাপন করেছে আমাদের দেশের সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা। যা আমরা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারি না। বাংলাদেশের সনাতনী হিন্দুদের অধিকার আদায়ের এবং জীবনের নিরাপত্তার জন্য এই সংগঠনের জন্ম হয়েছে।বাংলাদেশের সরকারকে বলতে চাই, আপনি আমাদের অধিকার ফিরিয়ে দিন। আপনি যে কমিটমেন্ট আমাদের সাথে করেছেন, তা রক্ষা করুন। না হলে আপনার বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন আরো বেগোবান হবে। এছাড়াও সাংবাদিক সহ উপস্হিত সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান ।
সাধারণ সম্পাদক রামদাস ঘরামি তার বক্তৃতায় বলেন, দেশের ও প্রবাসের আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের জানমাল রক্ষার্থে আপনাদের সকলের সহযোগিতা নিয়ে আমরা এক লক্ষ্যে কাজ করে যাবো। জন্মের পর আমাদের সবার মৃত্যু সুনিশ্চিত। তাই মৃত্যুর পরে আমাদের প্রতিটি মানুষের শেষ কৃত্য অনুষ্ঠান সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমাদের একটি নিজস্ব ফিউনারেল হোম থাকা খুব প্রয়োজন। তাই আপনাদের সকলের আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে অতি শীঘ্রই আমরা একটি ফিউনারেল হোম তৈরী করতে চাই। আরো বক্তব্য রাখেন (তাদের নাম সংযুক্ত করবেন)। নবনির্বাচিত সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, আজ সারাদিন প্রচুর বৃষ্টি, বৈরী আবহাওয়া, তা সত্ত্বেও আপনারা বৃষ্টিতে ভিজে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে এটাই প্রমাণ করেছেন আপনাদের এই সংগঠনকে আপনারা কত ভালোবাসেন। ভবিষ্যতে আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশে আমাদের ধমীর্য় রিতিনিতি রক্ষা করে সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেদের জীবনের নিরাপত্তা ও সম্পত্তি রক্ষার্থে যা যা করণীয় আমরা আপনাদের পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের যে কোন মন্ত্রণালয়ে ও প্রয়োজনে সরকারের সাথে আলোচনা করে আমাদের অধিকার সুরক্ষায় কাজ করে যাবো। এছাড়াও সংগঠনের চেয়ারম্যান ডা: প্রভাত দাস , উপদেষ্টা শিতাংশু গুহ , বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান নিউইয়র্ক ইনক এর সভাপতি ও সংগঠনের উপদেষ্টা নবেন্দ দত্ত , সাধারণ সম্পাদক ও কলম্বিয়া ইউনির্ভার্সিটির প্রফেসর এবং সংগঠনের উপদেষ্টা ডক্টর দ্বিজেন ভট্টাচার্য , উপদেষ্টা রূপ ভৌমিক, উপদেষ্টা ডক্টর জিতেন রয়, ডক্টর দিলীপ নাথ , উপদেষ্টা বিষ্ণু গোপ , দেবাশীষ পাল ,বিশিষ্ট লিল্পপতি উপদেষ্টা চন্দন সেন গুপ্ত ,উপদেষ্টা ইন্জিনিয়ার রন্জিত রায় , কৃস রুদ্র , অশোক ব্রহ্মচারী , সুকান্ত দাস টুটুল ,সুশীল সাহা , রন্জিত সাহা , মনিকা রায় চৌধূরী ,অরবিন্দ কিশোর দাস ,প্রদীপ মালাকার , নতুন কমিটির শ্রী ভবতোষ মিত্র , নিতাই নাথ ,সবিতা দাস , জয়দেব গাইন ,প্রনব রায় রুনু ,সন্জিত ঘোষ ,পরেশ ধর ,জলি সাহা ,সুমিতা বিশ্বাস , সুবর্না সেনগুপ্ত ,কেশব চক্রবর্তী ,প্রিতিস বালা , তাপস সাহা , চম্পা নন্দী সরকার , সমীর সরকার , হিমেন রায় , সুমন দাস , প্রমুখ । বক্তারা বলেন ,বাংলাদেশের হিন্দুরা আজ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় সরকারের ইন্দনে সঠিক বিচার না পেয়ে কারা ভোগ এবং আদালতে মামলা চালাতে গিয়ে সর্বশান্ত হয়ে গেছে । হিন্দু নির্যাতন এতো ঘৃন্য পর্যায়ে পৌছুছে যে , ১৯৭১ সালে হিন্দুর সংখ্যা ১৯% হতে আজ ৭.৯% এ এসে ঠেকেছে , মৌলবাদী সন্ত্রাসী ছাড়াও পরোক্ষ ভাবে সরকারী মদদে হিন্দুদের জমি দখল হচ্ছে । ১৫ বছর দেশ পরিচালনা করেও ২০১৮ সালে নির্বাচন ইসতেহারে সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু সুরক্ষা বিল পাশ কিংবা সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি ।পরে সাংস্কৃতিক সন্ধ্য ও নৈশ ভোজের আহ্বান জানিয়ে উপস্থিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাংস্কৃতিক সম্পাদক সুতিপা চৌধুরী সম্পা তার মধুর কণ্ঠে অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার দায়িত্ব দৃড়তার সাথে পালন করেছেন সেই জন্য তাকে সকলের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানানো হয়।
হল ভর্তি দর্শকদের মুহু মুহু করতালিতে এক প্রাণবন্ত পরিবেশ তৈরী হয়।
