৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ১০ জন নিয়েও মালদ্বীপকে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেক্সঃ
অলিখিত ফাইনালের ৫৯ মিনিটেই দুঃসংবাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ। সোহেল রানা দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখায় ১০ জনের দলে পরিণত হয়েছিল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। তবে ফয়সাল আহমেদ ফাহিম নৈপুণ্যে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে লিড তুলে নেয়া বাংলাদেশের বিপক্ষে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি মালদ্বীপ। টান টান উত্তেজনার ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান ধরে রেখে ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডে পা রেখেছে বাংলাদেশ।কিংস অ্যারেনায় মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রথম রাউন্ডের দ্বিতীয় লেগে মালদ্বীপকে ২-১ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে মালেতে প্রথম লেগে ১-১ গোলে ড্র করেছিল দুদল। তাতে দুই লেগ মিলিয়ে প্রথম রাউন্ডে ৩-২ ব্যবধানে জয় তুলে নিয়েছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।মালেতে প্রথম লেগ ড্র হওয়ায় কিংস অ্যারেনায় দ্বিতীয় লেগটি অলিখিত ফাইনালে পরিণত হয়েছিল। ২০২৬ বিশ্বকাপ যাত্রায় টিকে থাকতে দ্বিতীয় লেগে তাই জয়ের বিকল্প ছিল না দুদলের। এই ম্যাচ যে দল হারবে, তারা আগামী প্রায় এক বছর ফিফা-এফসির ম্যাচ পাবে না। জিতলে আগামী মাসেই বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ দল অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে প্রথম ম্যাচ খেলবে মেলবোর্নে। অস্ট্রেলিয়াসহ লেবানন, ফিলিস্তিনের বিপক্ষে খেলবে একে একে ৬টি ম্যাচ। হারলে ফিফা প্রীতি মাচ খেলা ছাড়া উপায় থাকবে না।এদিকে নিষেধাজ্ঞায় গোলবারের অতন্দ্রপ্রহরী আনিসুর রহমান জিকো, রক্ষণের প্রাণ তপু বর্মণ ও ফরোয়ার্ডে উদীয়মান তারকা মোরসালিন নেই বাংলাদেশ শিবিরে। ফলে র্যাঙ্কিংয়ে ৩৪ ধাপ এগিয়ে থাকা মালদ্বীপের বিপক্ষে কঠিন চ্যালেঞ্জই অপেক্ষা করছিল হ্যাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যদের জন্য। তবে আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে যেভাবে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া ম্যাচটিকে উল্লেখ করেছিলেন, ‘ম্যাচ অব দ্য ইয়ার, ফাইনাল অব দ্য ইয়ার’; কিংস অ্যারেনায় তেমনই এক ম্যাচের সাক্ষী হয়েছে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা। শেষ ৩৭ মিনিটে একজন কম নিয়েও দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে দেশের মানুষকে দারুণ এক জয় উপহার দিয়েছে জামাল বাহিনী।ম্যাচের ১১ মিনিটেই ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের নৈপুণ্যে দলকে লিড এনে দেন রাকিব হোসেন। মাঝমাঠ থেকে সতীর্থের বাড়ানো লম্বা পাস দ্রুত এগিয়ে গিয়ে দখলে নেন ফয়সাল। বাইলাইন থেকে শেষ মুহূর্তে তার বাড়ানো আলতো ক্রস ডি-বক্সে পেয়ে যান রাকিব। মালদ্বীপের দুই ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে তিনি বল জড়ান জালে। ঝাঁপিয়ে পড়েও নাগাল পাননি মালদ্বীপের গোলরক্ষক হুসেইন শরীফ।সমতায় ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে সফরকারীরা। ২১ মিনিটে দারুণ সুযোগও পেয়েছিল তারা। তবে ডি-বক্সে বাংলাদেশি ডিফেন্ডাররা যেভাবে চীনের মহাপ্রাচীর তৈরি করেছিল তাতে মালদ্বীপের তারকা ফরোয়ার্ড হামজা মোহাম্মদ গোলমুখে শটই নিতে পারেননি। ২৯ মিনিটে বাংলাদেশের ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন রাকিব। তবে ওয়ান অন ওয়ান পজিশনে তার শট ঠেকিয়ে দেন হুসেইন শরীফ। ৩৩ মিনিটে সমতায় ফিরতে পারতো মালদ্বীপ। বাংলাদেশি ডিফেন্ডারদের ব্যর্থতায় ডি-বক্সে বল পেয়ে যান হামজা। তবে গোলের উদ্দেশে ঠিকঠাক শট নিতে পারেননি তিনি। পরের মিনিটে বাংলাদেশকে হতাশায় ডোবান রাকিব। আক্রমণে উঠে ডানপ্রান্ত থেকে ক্রস পাঠান জামাল। ডি-বক্সে সে বল পেলেও কাজে লাগাতে পারেননি এ ফরোয়ার্ড।সে হতাশা না কাটিয়ে উঠতে ৩৫ মিনিটে গোল হজম করে বসে বাংলাদেশ। কর্নার থেকে হামজার পাঠানো ক্রস এক বাংলাদেশি ফুটবলারের মাথা স্পর্শ করে চলে যায় অরক্ষিত অবস্থায় থাকা আইসাম ইব্রাহিমের কাছে। তার জোরালো হেড ফেরানোর সুযোগই পাননি বাংলাদেশি গোলরক্ষক মিতুল মারমা। তাতে সমতায় শেষ হয় প্রথমার্ধ।তবে বাংলাদেশকে খুব বেশিক্ষণ অস্বস্তিতে থাকতে দেননি ফাহিম। ৪৬ মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে সাদ উদ্দিন গোলের উদ্দেশে শট নেন। ঝাঁপিয়ে পড়ে তার শট ঠেকিয়ে দিলেও পুরোপুরি ক্লিয়ার করতে পারেননি শরীফ। সোহেল রানা দখল নেয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু পারেননি। পেয়ে যান ফাহিম। জোরালো শটে জাল কাঁপান এ স্ট্রাইকার। তাতে লিডে ফেরে বাংলাদেশ। ৫৮ মিনিটে সোহেল রানার লম্বা ক্রস ডি-বক্সে ঠিকঠাক নাগাল পেলে ব্যবধানটা ৩-১ করার সুযোগ ছিল রাকিবের সামনে।পরের মিনিটে দুঃসংবাদ পায় বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়কে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ডটি দেখেন সোহেল রানা। তাতে ১০ জনের দলে পরিণত হয় বাংলাদেশ। এরপরও খুব একটা ভীত ছিল না লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। ৬১ মিনিটে রাকিবের পাস দখলে নিয়ে ডানপ্রান্ত ধরে আক্রমণে উঠেন জামাল। বল বাড়িয়ে দেন ডি-বক্সের দিকে এগিয়ে আসা ফাহিমের কাছে। তবে মালদ্বীপের এক ডিফেন্ডারের বাঁধায় গোলমুখে বল পেয়েও তিনি সুযোগটি কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন।অন্যদিকে ১০ জনের দল পেয়ে মালদ্বীপও সুযোগ খুঁজতে থাকে। তবে তারিক কাজী, বিশ্বনাথরা তাদের কোনো সুযোগই দেয়নি। উল্টো ৮৯ মিনিটে কর্নার থেকে সতীর্থের ক্রস হেডে মালদ্বীপের জালে জড়ান বিশ্বনাথ। তবে হেডের উদ্দেশে লাফানোর আগে মালদ্বীপের এক ফুটবলারের সঙ্গে ধাক্কা লাগায় ফাউল বিবেচনায় গোলটি বাতিল করেন রেফারি। যোগ করা সময়ে দারুণ এক আক্রমণে উঠেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু রাকিবের পাস দখলে নিয়ে ডি-বক্সে ঢোকার আগে বাজেভাবে ফাউলের শিকার হন জনি। তাকে ফাউল করে আফনাফ রশিদ লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। ফ্রি-কিক পায় বাংলাদেশ। যদিও সেটি কাজে লাগাতে পারেননি রাকিবরা। যোগ করা ৬ মিনিট শেষে রেফারি বাঁশি বাজায়। সঙ্গে সঙ্গে বিজয়োল্লাসে মেতে ওঠে জামালরা। গ্যালারিতে আনন্দে ভাসে লাল সবুজের সমর্থকরা।

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin
Share on print

আরও পড়ুন