৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কুমারী ও সন্ধিপূজার মধ্যদিয়ে মহাষ্টমীর পূজা শেষ

পলাশ কান্তি নাথঃ

আজ শুক্রবার মহাষ্টমী। মণ্ডপ-মন্দিরে ভক্ত দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। এদিনের মূল আকর্ষণ থাকে কুমারী ও সন্ধিপূজা। মহাষ্টমীর দিন সকাল থেকেই দেবীর মহাষ্টমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা শুরু হয়। এরপর সকাল সাড়ে ৯টায় কুমারী পূজা শুরু হয়ে শেষ হয় সাড়ে ১০টায়। দেবী পুরাণে কুমারী পূজার সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। এদিন কুমারী বালিকার মধ্যে বিশুদ্ধ নারীর রূপ কল্পনা করে তাকে দেবী জ্ঞানে পূজা করেন ভক্তরা। ১১ অক্টোবর শুক্রবার  প্রতিবারের মতো এবারও ঢাকার ও রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনে অনুষ্ঠিত হয় দেবী কুমারী পূজা। অন্যান্যবার সন্ধিপূজা সন্ধ্যা বা রাতের বেলায় অনুষ্ঠিত হলেও এ বছর তিথি মেনে তা দিনের বেলাতেই অনুষ্ঠিত হয়। পূজার সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে হাতে ফুল, বেলপাতা নিয়ে ভক্তরা মন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে দেবীর পায়ে অঞ্জলি দেন। এরপর দুপুরে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়।হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, সাধারণত এক থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা ব্রাহ্মণ বা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কুমারী নারীকে দেবী জ্ঞানে পূজা করা হয়। শ্রীরাম কৃষ্ণের কথামতে, কুমারী পূজার বিষয়ে বলা হয়েছে—শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর রূপ বেশি প্রকাশ পায় এবং মাতৃরূপ উপলব্ধি করাই কুমারী পূজার উদ্দেশ্য।শাস্ত্রমতে, এক বছর বয়সী কন্যাকে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরস্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কলিকা, পাঁচে সুভাগা, ছয়ে উমা, সাতে মালনী, আটে কুজ্বিকা, নয়ে কালসন্দর্ভা, দশে অপরাজিতা, এগারোতে রুদ্রানী, বারোতে ভৈরবী, তেরোয় মহালক্ষ্মী, চৌদ্দতে পীঠ নায়িকা, পনেরোতে ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোলো বছরে তাকে অন্নদা নামে অভিহিত করা হয়।নির্বাচিত কুমারীকে মহাষ্টমীর দিন ভোরে গোসল করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয়। তাকে সাজিয়ে কপালে সিঁদুর, পায়ে আলতা ও হাতে ফুল দেওয়া হয়। কুমারীকে সুসজ্জিত আসনে বসিয়ে ষোড়শোপাচারে (ষোলো উপাদান) দেবীজ্ঞানে পূজা করা হয়। এ সময় চারদিক শঙ্খধ্বনি, ঢাকের বোল, উলুধ্বনি আর দেবী স্তুতিতে মুখর হয়ে ওঠে।সনাতন ধর্মমতে, নবমীর পুণ্য তিথিতে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে বিশ্বে শুভ শক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন দেবী দুর্গা। নবমী তিথি শুরু হয় সন্ধিপূজা দিয়ে। অষ্টমী এবং নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে দেবী দুর্গার আরাধনা পুজোই হলো সন্ধিপূজা। অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর প্রথম ২৪ মিনিট সর্বমোট ৪৮ মিনিটে সন্ধিপূজা হয়। এই সময়েই দেবী দুর্গা চন্ড ও মুন্ড নামে দুই ভয়ংকর অসুরদের নিধন করেছিলেন। এই ঘটনাটিকে স্মরণ করার জন্যই প্রতি বছর অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে এই সন্ধিপূজা করা হয়। সন্ধিপূজার অন্যতম উল্লেখযোগ্য নৈবেদ্য হলো পদ্ম। এই পূজায় দেবীকে ১০৮টি পদ্ম অর্পণ করা হয়, ১০৮টি বেলপাতা এবং ১০৮টি মাটির প্রদীপ জ্বালানো হয়। নৈবেদ্যতে দেওয়া হয় গোটা ফল, জবা ফুল, সাদা চাল, শাড়ি, গহনা, এবং সাজ-সজ্জার দ্রব্যও থাকে।নবমীর দিনই দুর্গাপূজার অন্তিম দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ পরের দিন কেবল বিসর্জনের পর্ব। নবমীর রাতে উৎসব শেষ হয়। নবমীর রাতে তাই মণ্ডপে মণ্ডপে বিদায়ের ঘণ্টা বাজে।ভক্তরা জানান, ষষ্ঠী থেকে দুর্গাপূজার শুরু হলেও উৎসবের আনন্দটা পুরোদমে শুরু হয় মহাঅষ্টমী থেকে। মায়ের আগমনে আনন্দ করার পাশাপাশি থাকবে বিশ্বশান্তির জন্য মঙ্গল কামনাও। এবার সেনাবাহিনীর নিরাপত্তায় পূজা হওয়ায় সবাই নিরাপদ অনুভব করলেও সবার মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হবে, দেবীর কাছে সেই প্রার্থনাই করেছেন তারা।হিন্দু পুরাণ মতে, মহাসপ্তমীতে ভক্তদের কল্যাণ ও শান্তির আশীর্বাদ নিয়ে হিমালয় কন্যা দেবী দুর্গাপূজার পিঁড়িতে বসেন। শুরু হয় মূল পূজা। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল দুর্গোৎসবের মহাসপ্তমী। সকালে নবপত্রিকা স্নান ও পূজার পর দেবীর চক্ষুদানের মধ্য দিয়ে প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ভক্তের কাছে মৃণ্ময়ী প্রতিমা হয়ে উঠেছে চিণ্ময়ী। দেবীর চরণে অঞ্জলি দিয়ে তাই ভক্তরা জানিয়েছেন তাদের মনের আকুতি। ধর্মদাশ চট্টোপাধ্যায় জানান, এবার তিথির কারণে অষ্টমী পূজাও আগে হবে। শুক্রবার সকাল ৬টার আগে অষ্টমী পূজা শেষ হয়েছে এবং এরপর সন্ধিপূজা।বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির তথ্য মতে, এ বছর সারাদেশে ৩১ হাজার ৪৬১টি মণ্ডপ ও মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর সারাদেশে ৩২ হাজার ৪০৮টি দুর্গাপূজা হয়েছিল। সেই হিসাবে এবার ৯৪৭টি দুর্গাপূজা কম হচ্ছে। আর ঢাকা মহানগরে এবার ২৫২টি পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর ঢাকা মহানগরে ২৪৮টি পূজার আয়োজন হয়। সেই হিসাবে এবার ঢাকা মহানগরে চারটি পূজা বেড়েছে।পিতৃপক্ষের অবসানে গত ২ অক্টোবর শুভ মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষ সূচিত হয়েছে, যা মাতৃপক্ষ নামেও অভিহিত।

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin
Share on print

আরও পড়ুন