৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চিলমারী-ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে ঐতিহ্যবাহী অষ্টমী স্নানে লাখো পুণ্যার্থীর ঢল

রতন রায় অর্ঘ্যঃ

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ঐতিহ্যবাহী অষ্টমীর স্নানে লাখো পুণ্যার্থীর ঢল নেমেছে। উপজেলার চিলমারী নদী বন্দর ঘাট থেকে জোড়গাছ পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এবারের অষ্টমীর স্নান ও মেলার স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।মঙ্গলবার(১৬ এপ্রিল) ভোর ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত স্নানের উত্তম লগ্ন থাকলেও দিনব্যাপী স্নান ও মেলা চলবে।দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত পুণ্যার্থীদের থাকার জন্য উপজেলার প্রায় ২২টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়েছে। পুণ্যার্থীদের রাত্রী যাপনের জন্য ৪৪টি অস্থায়ী বুথ, সরকারী ও বেসরকারীভাবে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য নলকুপ ও পয়নিস্কাশনের জন্য টয়লেট ও স্নান পরবর্তী পোশাক পরিবর্তনের জন্য বুথ স্থাপন করা হয়েছে। পুণ্যার্থীদের পূজাপর্বের জন্য প্রায় দুই শতাধিক ব্রাহ্মণ পূজারি দায়িত্ব পালন করবেন।হিন্দু সম্প্রদায়ের পঞ্জিকা অনুযায়ী চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করলে ভক্তের সমস্ত পাপ ধুয়ে মুছে যায়। পাপমোচনের অভিপ্রায়ে তাই প্রতি বছর জেলা ও জেলার বাইরে থেকে লক্ষ লক্ষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থী ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করতে আসেন। জানা যায়, প্রায় ৫০০ বছর থেকে চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথিতে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে এ স্নান পর্ব চলে আসছে।এবারের স্নানের তিথি ভোর সাড়ে ৪টায় শুরু হওয়ায় দূরের পুণ্যার্থীগণ একদিন পূর্বে স্নান মেলা নিকটতম স্থানে উপস্থিত হয়েছেন। তারা চিলমারী উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আত্নীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। কেউ কেউ আবার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিচ্ছিন্নভাবে বিছানা করে রাত্রী যাপন করেছেন।কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলা হিন্দু মহাজোট এর সভাপতি শ্রী রতন কুমার রায় (৩১) জানান,গত বছরের তুলনায় এবার মেলার পরিবেশ খুব ভালো লাগলো।আগামীতে আরো ভালো হবে বলে আশা রাখি।রাজারহাট উপজেলার বোতলার পাড় থেকে আসা ছচিন্দ্র রায় (৫০) জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে চিলমারীর বান্নির মেলায় আসি। প্রতিবার রাস্তায় প্রচুর ভীর থাকে যার কারনে আসতে অনেক সময় লাগে। এবার রাস্তায় গাড়ির তেমন ভীর নাই। কাল ভোরে বাসা থেকে বের হইছি। এখানে এসে নেমে স্নান করলাম। স্নান শেষ এখন পরিবার নিয়ে একটু মেলায় কেনা কাটা করবো।ঐতিহ্যবাহী চিলমারী ব্রহ্মপুত্র নদে অষ্টমীর স্নানে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোট কুড়িগ্রাম জেলা কমিটি সভাপতি শিবু চন্দ্র বর্মন জানান, অষ্টমীর স্নানে আমাদের জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোট কুড়িগ্রাম জেলার পক্ষ থেকে বুথ পুন্যার্থী দের জন্য জলখাবার ও পোশাক পরিচ্ছেদ পরিবর্তনের জন্য ব্যবস্থা করেছি আমরা । পার্শ্ববর্তী ভারত থেকেও কিছু পুণ্যার্থী এসেছে। সব মিলে প্রায় ২লাখ পুণ্যার্থী স্নান করতে এসেছেন বলে ধারনা করা হচ্ছে। চিলমারী উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ,আনসার বাহিনী ও জনপ্রতিনিধি সহ স্থানীয় লোকজন পুণ্যার্থীদের নানা ভাবে সহযোগিতা করছে।চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিনহাজুল ইসলাম বলেন, চিলমারীর ব্রহ্মপুত্র নদে অষ্টমীর স্নান উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন আসে। তাই আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিলমারীর বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোড়দার করেছি। ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট, ডুবুরি দল এবং পুলিশ, আনসার বাহিনীর সদস্য সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অসুবিধা হয়নি। তবে গতকাল রাতে একজন পুরোহিতের মৃত্যু হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin
Share on print

আরও পড়ুন