৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

পরম আনন্দে লেখাপড়া শিখতেছে রোহিঙ্গা শিশুরা

নিউজ ডেক্সঃ
একটা হাতি উড়ে উড়ে কলা খাচ্ছে। ঘোড়া বুঁদ হয়ে শুঁকছে ফুল। খরগোশ ছাতা মাথায় গাইছে গান। আর তাদের এসব দেখে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে শিশুরা। রূপকথার কল্প-গল্প নয় এসব; এমন দৃশ্য বাস্তবের। তবে এসব ফুল, পাখি, জন্তু, খেলনার সবগুলোই রঙিন কাগজের। সুতায় টাঙানো এসব কাগুজে খেলনা যখন বাতাস লেগে দুলে ওঠে একই ছন্দে তার সঙ্গে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে মেঝেতে বসা শিশুরা।কেউবা হাত তালি দিয়ে উল্লাস করে ওঠে। একটু দূরে দাঁড়ানো এক তরুণী হাসিমুখে শিশুদের শান্ত হতে বলেন। কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৭ ঢোকার পথে হাতের ডান পাশের একটি ঘরে এমন দৃশ্য প্রতিদিনই দেখা যায়। এটি ক্যাম্পের শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য একটি বেসরকারি সংস্থা পরিচালিত একটি লার্নিং সেন্টার।রোহিঙ্গা শিশু জিহান বয়স ছয় থেকে সাত বছর। ইউনিসেফের দেয়া নীল রঙের ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে ওরা প্রতিদিনই আসে এই সেন্টারে। তারা জানায়, সেন্টারে এলে তাদের খুব ভালো সময় কাটে। নয়ন বলে, এখানে এলে লেখাপড়া যেমন হয় তেমনি হাসি আনন্দও হয়। শিক্ষকরা তাদের কিছু বলেন না।এই সেন্টারে ইংরেজি আর অঙ্ক শেখান রুমানা। তিনি জানান, শিশুদের বার্মিজ ভাষা শেখানোর জন্য আরেকজন শিক্ষক রয়েছেন। সেন্টারে ৩৫ মিনিট করে ইংরেজি ও অঙ্ক শেখানো হয়। রুমানা আরো বলেন, বাচ্চাদের একটানা ক্লাস করানো হয় না। ক্লাসের মাঝখানে বিরতি দেয়া হয়। ওই সময় তাদের খেলার ব্যবস্থাও থাকে। তাদের খেলার মধ্য দিয়ে বর্ণমালা শেখানো হয়। এই শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে আমার খুব ভালো লাগে। ওরা সহজে পড়া ধরতে পারে।

মধুরছড়া ও ময়নার ঘোনা ক্যাম্পেও দেখা গেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শিশুদের শিক্ষা আর মনোবিকাশে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)সহ বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার চেষ্টার কমতি নেই। তবে উন্নয়ন কর্মীরাই বলছেন, এসব সেন্টারের মাধ্যমে ক্যাম্পের শিশুরা পড়ালেখার কিছুটা সুযোগ পাচ্ছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তাদের এই প্রচেষ্টা নিতান্তই কম। অনেক শিশু বঞ্চিত রয়েছে শিক্ষার সুযোগ থেকে। এনজিও মুক্তির এক কর্মকর্তা জানায় , বিভিন্ন এনজিওর পরিচালিত অন্তত এক হাজার ২০০ শিক্ষাকেন্দ্র থেকে ৩০টি ক্যাম্পে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষাদান করা হচ্ছে। তবে এগুলো যথেষ্ট না হওয়ায় আরো শিক্ষাদান কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে।শিক্ষাদান কেন্দ্রগুলোর কয়েকজন শিক্ষক জানান, রোহিঙ্গারা শিক্ষায় অনেক পিছিয়ে আছে। তবে শিশুরা শিক্ষা নিতে আগ্রহী। বেশিরভাগ শিশু নিয়মিত স্কুলে এলেও অনেককে আবার ঘর থেকে ডেকে আনতে হয়। সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী এসব সেন্টারে শিশুদের অঙ্ক ও ইংরেজি শেখানো হয়। পাশাপাশি তাদের বার্মিজ ভাষা শেখাতে অপেক্ষাকৃত শিক্ষিত রোহিঙ্গাদের সাহায্য নেয়া হয়।রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে গেলে যাতে বোঝা হয়ে থাকতে না হয়, এ কারণে তাঁদের বিভিন্ন জীবনমুখী প্রশিক্ষণ দেওয়ার এ উদ্যোগ। এ চিন্তা থেকে রোহিঙ্গা শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা করানোরও উদ্যোগ আছে আশ্রয়শিবিরগুলোতে। ২০১৮ সাল থেকে এখানে পড়ালেখা শেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin
Share on print

আরও পড়ুন