৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

২০২৩ সালে নোবেল পুরস্কার পেলেন যারা

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
এ বছর নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা শেষ হয়েছে। প্রতি বছর অক্টোবরের প্রথম সোমবার থেকে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। ২০২৩ সালে যারা নোবেল পুরস্কার পেলেন তাদের নিয়ে বিস্তারিত রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।চিকিৎসাবিজ্ঞান
এ বছর চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পেয়েছেন ক্যাটালিন কারিকো এবং ড্রু উইসম্যান। কোভিড-১৯ রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর নিউক্লিওসাইড বেস পরিবর্তন সংক্রান্ত এমআরএনএ টিকা আবিষ্কারের জন্য এই পুরস্কার পেলেন তারা। গত সোমবার (২ অক্টোবর) সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ বছর বিজয়ী হিসেবে তাদের নাম ঘোষণা করে।
ক্যাটালিন কারিকোর জন্ম ১৯৫৫ সালে হাঙ্গেরির জোলনকে। আর যুক্তরাষ্ট্রের লেক্সিংটনে ১৯৫৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন ড্রু উইসম্যান। তারা দুজনই যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। বিজয়ীদের প্রসঙ্গে নোবেল কমিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘তাদের যুগান্তকারী আবিষ্কারের মাধ্যমে মানবদেহের ইমিউন সিস্টেমের সঙ্গে এমআরএনএ কীভাবে যোগাযোগ করে সে সম্পর্কে এতদিনের ধারণা মৌলিকভাবে পরিবর্তন হয়েছে। বিজয়ীরা আধুনিক সময়ে মানব স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় একটি হুমকির ভ্যাকসিন বিকাশে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছেন।’
পদার্থবিজ্ঞান
সবচেয়ে কম সময়ে আলোকে ধারণ করার ব্যাপারে গবেষণার জন্য ২০২৩ সালে তিন জন পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। গত মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) রয়েল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্স তাদের নাম ঘোষণা করে। বিজয়ীরা হচ্ছেন-যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির পিয়েরে অ্যাগোস্টনি, জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব কোয়ান্টাম অপটিকসের ফিরেন্স ক্রাসজ এবং সুইডেনের লন্ড ইউনিভার্সিটির অ্যান লরিয়েল।রয়েল সুইডিশ অ্যাকাডেমি বলেছে, ‘মানবতাকে পরমাণু ও অণুর ভিতরে ইলেকট্রনের জগত অন্বেষণের জন্য নতুন সরঞ্জাম দিয়েছে এই তিন জনের গবেষণা। যেখানে ইলেক্ট্রনগুলি চলে বা শক্তি পরিবর্তন করে সেখানে আলোর অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত স্পন্দন তৈরি করার একটি উপায় তারা উদ্ভাবন করেছেন যা দ্রুত প্রক্রিয়াগুলি পরিমাপে ব্যবহার করা যেতে পারে।’
রসায়ন
কোয়ান্টাম ডটের আবিষ্কার ও উন্নয়ন এবং ন্যানোপার্টিকলের আকার ও বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে অবদান রাখার জন্য চলতি বছর রসায়নে নোবেল পেয়েছেন তিন বিজ্ঞানী। গত বুধবার (৪ অক্টোবর) রয়েল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স তাদের নাম ঘোষণা করেছে।বিজয়ীরা হলেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলোজির মুঙ্গি জি বাউইন্ডি, কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির লুইস ই ব্রাস এবং ন্যানোক্রিস্টালস টেকনোলজির ইনকরপোরেশনের আলেক্সি ই.ইকিমভ।নোবেল কমিটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২০২৩ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে কোয়ান্টাম ডটের আবিষ্কার ও উন্নয়ন এবং ন্যানোপার্টিকলের আকার ও বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে অবদান রাখার জন্য। ন্যানোটেকনোলজির এই ক্ষুদ্রতম উপাদানগুলি এখন টেলিভিশন এবং এলইডি লাইট থেকে তাদের আলো ছড়িয়ে দেয় এবং অন্যান্য অনেক জিনিসের মধ্যে টিউমার টিস্যু অপসারণ করার সময় সার্জনদেরও নির্দেশনা দিতে পারে।’
সাহিত্য
২০২৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন নরওয়ের লেখক ও নাট্যকার ইয়োন ফসে। রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি গত বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সম্মানজনক এ পুরস্কারের জন্য তার নাম ঘোষণা করেছে।৬৪ বছর বয়সী ইয়োন ফসের লেখা নাটক ও সাহিত্যের প্রশংসা করে সুইডিশ একাডেমি বলেছে, তিনি তার লেখায় তুলে এনেছেন অনুচ্চারিত থেকে যাওয়া বহু কথা। বিশ্বজুড়ে তার লেখা নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ইয়োন ফসের জন্ম ১৯৫৯ সালে। ৪০টির মতো নাটক লিখেছেন তিনি। নাটক ও উপন্যাস ছাড়াও প্রবন্ধ, কবিতা, শিশুতোষ বই রয়েছে ইয়োন ফসের। রয়েছে অনুবাদের বইও।ইয়োন ফসে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে খ্যাতিমান নাট্যকারদের একজন। সুইডিশ একাডেমির বর্ণনায় তিনি এ সময়ে সবচেয়ে বেশি মঞ্চস্থ হওয়া অন্যতম নাট্যকার। তার কথাসাহিত্যের খ্যাতি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। নরওয়েতে বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতাকে শিল্পিত সুষমায় লেখায় তুলে ধরেছেন ইয়োন ফসে। মানুষের উদ্বেগ ও দ্বিধাকে উপস্থাপনের মুনশিয়ানার কারণে তার রচনা প্রশংসিত হয়ে থাকে।নোবেল কমিটি বলেছে, একক কোনো লেখার জন্য নয়, তার রচিত বিপুল সাহিত্যকর্মের জন্যই ইয়োন ফসেকে পুরস্কারটি দেওয়া হলো। কারণ, তার সাহিত্যকর্মের ছোট তালিকা করা যায় না, সেটা করার চেষ্টাও অসম্ভব কঠিন। ইয়োন ফসের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে তার উপন্যাস ‘বোটহাউস’ (১৯৮৯) এবং ‘মেলাংকলি’ ১ ও ২ (১৯৯৫–১৯৯৬)। সাহিত্যিক হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৮৩ সালে ‘রেড, ব্ল্যাক’ উপন্যাসের মধ্য দিয়ে। আত্মহত্যার মনস্তাত্ত্বিক ভাষ্য তুলে ধরা এই উপন্যাসটিই তার পরবর্তী সাহিত্যকর্মের সুর বেঁধে দেয়।নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান আন্দ্রেয়াস ওলসন তাকে বর্ণনা করেছেন নানা বিচারে অনন্য এক লেখক হিসেবে। তিনি বলেছেন, ‘তার লেখার বিশেষত্ব হচ্ছে মানব–ঘনিষ্ঠতা। সেসব আপনার গভীরতর অনুভূতিগুলোকে স্পর্শ করে যাবে। উদ্বেগ, নিরাপত্তাহীনতা, জীবনের অর্থ ও মৃত্যু-এ রকম নানা বিষয়, মানুষকে আসলে যার প্রতিটির মুখোমুখি হতে হয়।’
শান্তি
শান্তিতে নোবেল পেলেন ইরানের মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদী। গত শুক্রবার (৬ অক্টোবর) নোবেল কমিটি তার নাম ঘোষণা করে। নোবেল কমিটি জানায়, ইরানে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই এবং মানবাধিকার ও সবার জন্য স্বাধীনতার পক্ষে তার যে প্রচেষ্টা, সেজন্য তিনি এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
নোবেল কমিটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, নার্গিস মোহাম্মদী একজন নারী, মানবাধিকারকর্মী ও স্বাধীনতা যোদ্ধা। তার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও অধিকারের জন্য সাহসী লড়াইয়ের ফলে ব্যক্তিগত অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। ইরানের শাসকরা তাকে ১৩ বার গ্রেপ্তার করেছে, ৫বার দোষী সাব্যস্ত করেছে, সব মিলিয়ে ৩১ বছরের কারাদণ্ড ও ১৫৪টি বেত্রাঘাত করেছে। তিনি এখনও কারাগারে।২০০৩ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী আরেক ইরানি নারী শিরিন এবাদির নেতৃত্বাধীন এনজিও ডিফেন্ডার্স অব হিউম্যান রাইটস সেন্টার-এর উপ-প্রধান নার্গিস মোহাম্মদী।
অর্থনীতি
শ্রমবাজারে নারীর ভূমিকা নিয়ে গবেষণার জন্য চলতি বছর অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার (যা অর্থনীতিতে নোবেল স্মারক পুরস্কার বা আলফ্রেড নোবেল স্মৃতি রক্ষার্থে অর্থনীতিতে ভেরিজ রিক্সবাঙ্ক পুরস্কার হিসেবে পরিচিত) পেয়েছেন অধ্যাপক ক্লদিয়া গোল্ডিন।রয়েল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস ২০২৩ সালের নোবেল বিজয়ী হিসাবে সোমবার ( ৯ অক্টোবর ) যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপকের নাম ঘোষণা করেছে।নোবেল কমিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ক্লদিয়া গোল্ডিন ‘শতাব্দীজুড়ে নারীদের উপার্জন এবং শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের প্রথম ব্যাপক বিবরণ প্রদান করেছেন। তার গবেষণা পরিবর্তনের কারণ, সেইসাথে বিদ্যমান লিঙ্গ ব্যবধানের মূল উৎস প্রকাশ করে।

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin
Share on print

আরও পড়ুন