৩রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সাংবাদিক পরিচয়ে সংবাদপত্রের শিরোনামে ‘চাঁদাবাজ এম হান্নান রহিম তালুকদার’

নিজস্ব প্রতিবেদন :
গত কয়েয়েক দিন ধরে সাংবাদিকদের মাঝে চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি হয়েছে ‘ভুয়া সাংবাদিক’ যুবদল নেতা এম হান্নান রহিম তালুকদারকে ঘিরে। সাংবাদিক পরিচয়ে সংবাদপত্রের শিরোনামে। সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদপত্র, স্যোসাল মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর একর পর এক বেরিয়ে আসছে ‘ভুয়া সাংবাদিক’ ও যুবদল নেতা এম হান্নান রহিম তালুকদার অপকর্মের খবর। সাংবাদিক পরিচয় গত ১৫ বছর সাবেক মন্ত্রীর আত্মিয়ের ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজি, মিথ্য সংবাদ পরিবেশন করে জোরপূর্বক টাকা আদায়সহ অসংখ্য অভিযোগ এই ব্যক্তি বিরুদ্ধে। আনোয়ারা ও চট্টগ্রাম শহরে এম হান্নান রহিম তালুকদার রয়েছে অসংখ্য ‘ভূয়া সাংবাদিক’ সিন্ডিকেট। তিনি ও তার সিন্ডিকেট একত্রিত হয়ে গত কয়েক মাস আগে মাহাতা গ্রামে এক দোকানদার থেকে মামলার ভয় দেখিয়ে পঁঞ্চাশ হাজার টাকা আদায় করে, পরে অপর সিন্ডিকেরর মাধ্যমে আরো বিশ হাজার টাকা আদায়ের জন্য জোর করেছিল। এই ‘ভূয়া সাংবাদিক’ সিন্ডিকের মাধ্যমে তিনি কয়েক স্তরের সংবাদ পরিবেশন করে চাঁদা আদায় করে। এছাড়াও তিনি নিজেকে দৈনিক চট্টগ্রাম সংবাদ-এর সম্পাদক, সিএসটিভি২৪-এর চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য বলে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন।
এক প্রতারক সাংবাদিকের ছদ্মবেশে গেস্ট হাউসে ঢুকে তল্লাশি চালিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগে সংবাদ প্রকাশের পর গত ১৬ জুন ২০২৫ইং. সোমবার রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরের কোতোয়ালী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে চান্দগাঁও থানা পুলিশের একটি দল। উক্ত অভিযানে নেতৃত্ব দেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আফতাব উদ্দিন। ‘ভুয়া সাংবাদিক’ ও যুবদল নেতা এম হান্নান রহিম তালুকদারের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা (এফআইআর নং-৭) ছাড়াও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) চান্দগাঁও থানায় (এফআইআর নং-৩৪) এবং আনোয়ারা থানার সিআর মামলা (নং-২১০৭/২১) রয়েছে।
সূত্রমতে, গত ৫ জুন ২০২৫ইং. রাত ১১টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার ‘পপুলার গেস্ট হাউজ’-এ হান্নান রহিম ও তার সহযোগীরা সাংবাদিক পরিচয়ে প্রবেশ করেন। এরপর ক্যামেরা হাতে বিভিন্ন কক্ষে গিয়ে তল্লাশি চালান এবং অতিথিদের মুখোমুখি জেরা শুরু করেন। কারা এসেছে, কী উদ্দেশ্যে হোটেলে উঠেছে, তারা স্বামী-স্ত্রী কি না, এমন ব্যক্তিগত প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে অতিথিদের বিব্রত ও আতঙ্কিত করেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ভয় দেখিয়ে হোটেলের মালিকপক্ষ থেকে চাঁদা আদায় করা। তারা হুমকি দেন, চাঁদা না দিলে হোটেলের বিরুদ্ধে ‘নেগেটিভ নিউজ’ প্রকাশ করবেন এবং ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। তল্লাশির পুরো ঘটনাটি ক্যামেরায় ধারণ করে পরে সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করেন হান্নান রহিম নিজেই। ভিডিওটি ছিল ১৫ মিনিট ৪৪ সেকেন্ড দীর্ঘ এবং ফেসবুকে পোস্ট হতেই তা ভাইরাল হয়ে পড়ে। ঘটনার পর গেস্ট হাউসটির এক স্টাফ জাকির হোসেন চান্দগাঁও থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। মামলা (নং-২০) দায়ের হয় পেনাল কোডের ১৪৩, ৪৪৮, ৩৮৫ ও ৫০৬ ধারায়। এরপর থেকেই রহিমকে ধরতে মাঠে নামে পুলিশ।
এম হান্নান রহিম তালুকদার যেসব পরিচয় ব্যবহার করছেন তার অধিকাংশই ভুয়া। হান্নান রহিম নিজেকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য হিসেবে দাবি করলেও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাংবাদিক নেতার ভাষ্য, “এই নামে আমাদের সদস্য তালিকায় কেউ নেই।” এছাড়াও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের আরেক নেতা বলেন, “হান্নান রহিম তালুকদার আমাদের ইউনিয়নের সদস্যও নন। তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নিজের পরিচয় বানিয়েছেন।” তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার একাধিক ছবি রয়েছে যেখানে তাকে বিএনপি ও যুবদল নেতাদের সঙ্গে দেখা গেছে। নিজেকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্যসচিব প্রার্থী বলেও বিভিন্ন ব্যানার ও পোস্টারে দাবি করেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, এম হান্নান রহিম তালুকদার গত ১৫ বছরে সাবেক মন্ত্রীর আত্মিয়ের ছাত্রছায়ায় বেশদাপটের সাথে ছিলেন। কিন্তু ২০২৪ সালের আগস্টে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ভবনে সংঘটিত হামলা ও লুটপাটের ঘটনায়ও তার নাম উঠে আসে। পরে তাকে প্রেসক্লাবের ‘আহ্বায়ক’ দাবিদার চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম ও ‘সদস্য সচিব’ জাহিদুল করিম কচির সঙ্গে ছাড়াও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) একাধিক অনুষ্ঠানে তাকে দেখা গেছে।
বর্তমানে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। পুলিশ ভাষ্যমতে, তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, যা তদন্তের আওতায় আনা হচ্ছে।
‘ভুয়া সাংবাদিক’ এম হান্নান রহিম তালুকদারকে গ্রেপ্তার খবর ছড়িয়ে পড়লে আনোয়ারায় সাধারণ মানুষ স্বস্তি বোধ করেন। ভুক্তভোগী অনেকে বলেন, এই ‘ভুয়া সাংবাদিক’ এম হান্নান রহিম তালুকদারকে আরো আগে গ্রেপ্তার করা উচিত ছিল।

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin
Share on print

আরও পড়ুন