৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রাজারহাটে ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাকে ঘুষ না দেওয়ায় খাদ্য ব্যবসায়িকে হয়রানির অভিযোগ

রতন রায় রাজারহাট প্রতিনিধিঃ

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা শরিফ আহমেদকে ঘুষ না দেয়ায় তালিকাভূক্ত মিল চাতাল ব্যবসায়ির বরাদ্দকৃত চাল ফেরত দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতি মেট্রিক টন চালের বিপরীতে ৫হাজার টাকা ঘুষ চেয়ে না পাওয়ায় রবিবার গুদামে ২টি ট্রলি ভর্তি চাল অর্ধদিবস রাখার পরও ওই দিন সন্ধ্যায় তা ফেরত দেয়ার অভিযোগ করেন সেলিম আহমেদ নামের এক খাদ্য ব্যবসায়ি।এরআগে খাদ্য গুদামে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগে কৃষকরা ওই ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানব বন্ধনের পর কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর শতাধিক কৃষকের স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি প্রদান করেছিল। এছাড়া গত ঈদুল আযহায় দুস্থ-অসহায়দের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফে খাবার অনুপযোগী দুর্গন্ধযুক্ত নিম্ন মানের চাল বিতরণের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। এরআগে ফেয়ার প্রাইজ ও টিসিবি’তেও পঁচা চাল বিতরনের অভিযোগ উঠে।খাদ্য ব্যবসায়ী সেলিম আহমেদ অভিযোগ করেন,আজাদ চাল কলের নামে ৯.৬৬০ মেট্রিক-টন চাল বরাদ্দের বিপরীতে রবিবার দুপুরে আমি দুই ট্রলিতে পুরো চাল ৯.৬৬০মেট্রিক টন চাল গুদামে দেয়ার জন্য নিয়ে যাই। এসময় খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা শরিফ আহমেদ আমার কাছে কেজিতে ৫টাকা হিসেবে প্রতি মেট্রিক টন চালের জন্য ৫হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। নীতিমালা অনুযায়ী এবং মান সম্মত চাল দেয়ায় আমি তাকে কোন ঘুষ দিতে পারবো না বললে তিনি আমার চাল গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান এবং আমার সাথে অসাদাচরণ করেন। একারনে আমি খাদ্য গুদামে চালের ট্রলি আটকা থাকাবস্থায় সাংবাদিকদের বিষয়টি অবগত করি। ঘুষের দাবিতে গত ঈদের আগে দেয়া ১২হাজার ৯০কেজি চালের বিলও আটকে রেখেছেন বলে অভিযোগ করেন।

তবে ওই খাদ্য ব্যবসায়ির অভিযোগ সহ ধান ক্রয়ে অনিয়ম ও বিভিন্ন সময় পচা চাল বিতরনের অভিযোগ অস্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা শরিফ আহমেদ দাবি করেন,নিম্ম মানের ও পুরোনো বস্তায় চাল আনায় নেয়া হয়নি। ভালো চাল হলে নেয়া হতো এবং বিল আটকে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন,তার পূর্বের বিল গুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে,যথা নিয়মে বিল পাবেন।এদিকে সম্প্রতি কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর শতাধিক কৃষকের স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে কৃষকরা অভিযোগ করেন,চলতি অর্থ বছর রাজারহাট উপজেলা খাদ্য গুদামে ৩২টাকা কেজি দরে ১হাজার ২৮০মেট্রিক টন ইরি-বোরো ধান ক্রয়ের বরাদ্দ দেয় খাদ্য অধিদপ্তর। গত ১৩মে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা শরিফ আহমেদ কৃষকদের অনুপস্থিতিতে মোবাইল এ্যাপসে লটারি দেখিয়ে তালিকা প্রনয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তালিকায় উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৪১২জন ছোট,বড় ও মাঝারি কৃষকের নামে ৩২টাকা কেজি দরে তিন মেট্রিক টন হিসেবে ধান সংগ্রহের কথা উল্লেখ করা হয়। ফলে যার এক মেট্রিক টন ধানও চাষাবাদ হয় না এমন কৃষকের কাছ থেকেও তিন মেট্রিক টন হিসেবে ধান সংগ্রহের সুযোগ সৃষ্টি হয়। আবার যে কৃষক ১০/২০মেট্রিক টন ধান চাষাবাদ করেন তার কাছ থেকেও কোন ধান ক্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়নি।এতে উপজেলার ৩৮হাজার ৮৫৩জন কৃষি কার্ডধারী কৃষকের মধ্যে মাত্র ৪১২জন কৃষকের নাম তালিকায় স্থান পেয়েছে। অথচ কৃষকদের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে লটারির মাধ্যমে একজন কৃষকের কাছ থেকে তিন মেট্রিক টনের পরিবর্তে এক মেট্রিক টন হিসেবে ক্রয় করা হলে অন্তত ১হাজার ২৮০জন কৃষক ন্যায্য মূল্যে ধান বিক্রির সুবিধা পেতেন বলে তারা অভিযোগ করেন। এতে করে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের নির্দেশ থাকলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলে দাবি কৃষকদের।এরআগে তালিকা গোপন করে ওসিএলএসডি দু’জন খাদ্য ব্যবসায়ির সাথে যোগসাজস করে তাদের মাধ্যমে তালিকাভূক্ত অধিকাংশ কৃষকদের কৃষি কার্ডগুলো সংগ্রহ করে নিজেরাই ধান সরবরাহের পায়তারা করেছেন বলেও স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেন তারা। অনিয়মের কারণে খাদ্য গুদামে ধান ক্রয় উদ্ধোধনের একমাস অতিবাহিত হলেও এপর্যন্ত মাত্র ২৭মেট্রিক টন ধান করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।এবিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাইফুল কবির খান বলেন,চাল গুলো মানদন্ড বহির্ভূত হওয়ায় ফেরত দেয়া হয়েছে। শরিফ আহমেদের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ গুলো তদন্ত করতে ৩সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামি ৫কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে,দোষী প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin
Share on print

আরও পড়ুন