
পলাশ কান্তি নাথঃ
আজ শুভ মহালয়া, পিতৃপক্ষের শেষ ও দেবীপক্ষের শুরু। এর মধ্য দিয়ে শুরু হল শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। বোধনে দেবীকে আবাহনের পর মহাষষ্ঠীতে শুরু হবে দুর্গোৎসব। তাই সারাদেশে মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে প্রস্তুতি। এবছর সারাদেশে ৩২ হাজার ৪০৮টি দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।আলোয় ভরা প্রকৃতির অবারিত সৌন্দর্যের মাঝে এখন অপেক্ষা ঢাকের বাদ্যের। মাতৃরূপিনী, শক্তিরূপিনী, দেবী দুর্গা আসবেন ধরনীতে।দেবী দুর্গাকে সাড়ম্বরে বরণ করে নিতে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে আয়োজন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতি চলছে রাজধানীসহ সারাদেশের মণ্ডপগুলোয়।শ্রী শ্রী চণ্ডিতে বলা হয়েছে, মহালয়া হচ্ছে পুজো বা উৎসবের আলয়। এখানে আলয় শব্দটির একটি অর্থ হচ্ছে আশ্রয়। পিতৃপক্ষের শেষ এই দিন মহালয়া দুর্গাপূজার সঙ্গে যুক্ত কোনো মহোৎসব নয়, বরং এটা পিতৃপুরুষের মহোৎসব— কোনো সময় তর্পণ না করলেও মহালয়ার তর্পণে সর্বসিদ্ধি, মনে করা হয়।দুর্গাপূজার সঙ্গে তার বাস্তব সম্পর্ক এইটুকুই যে, এই দিনেই দুর্গার মূর্তি-কারিগরেরা অনেকেই দুর্গামূর্তির চক্ষুদান করেন। হয়তো বা এইজন্যেই যে মা জননী চোখ খুলেই দেখবেন— তাঁর সন্তানেরা পিতা-মাতা পিতৃপুরুষকে ভোলেনি, মহালয়ার তর্পণ সেরেই তারা বিশ্বাত্মিকা জগজ্জননীর পূজা-আরাধনায় মন দেবে পাঁচ দিনের সাড়ম্বর মাতৃতন্ত্র যেন পনেরো দিনের পিতৃতান্ত্রিকতাকে আগলে নিয়ে চলতে পারে।অনেকে বলেন, দেবলোকের তলায় তলায় একটা পিতৃলোকের ব্যবস্থা করেছেন শাস্ত্রকারেরা। এই পিতৃলোকেই প্রয়াত মাতা-মাতামহীরাও থাকেন। মহালয়া সেই অর্থে এমনই একটা নির্দিষ্ট দিন, যেদিনে সমস্ত প্রয়াত জনের স্মরণ-তর্পণ করা যায়। মহালয়া সম্বন্ধে আরও একটা শাস্ত্রপ্রসিদ্ধ কথা হল— এটা সেই রকম একটা দিন যখন সমস্ত পিতৃ-মাতৃ পুরুষেরা নিজেদের আবাস পিতৃলোক ছেড়ে নেমে আসেন অধস্তন পুরুষের কাছাকাছি। পিতৃপুরুষ-মাতৃপুরুষদের এই সমাবেশটুকু যে মহান আবাস বা আলয় তৈরী করে দেয়। সেটাই মহালয়া অর্থাৎ মহালয়া তিথি। আর মহালয়া তিথির সবচেয়ে বড়ো বিশেষত্ব হল তর্পণ। এটা পিতৃপক্ষের শেষ দিন এবং এই তিথির আসল স্বরূপ হল অমাবস্যতর্পণ মানে তৃপ্ত করা। এই তৃপ্তির উপাদান সামান্য তিল আর জল। মহালয়ার দিন পিতৃ-মাতৃপুরুষের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপক তর্পণটুকু যেন ব্যক্তিকেন্দ্র থেকে বিশ্বজনীন হয়ে পড়ে।সারাদেশে এবার ৩২ হাজার ৪০৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। এর মধ্যে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হবে ২৪৫টি পূজা। আগামী ২০শে অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে ২৪শে অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব।
