২২শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সাঁথিয়ায় বাউশগাড়ী ” গনহত্যা দিবস” পালিত

পাবনা জেলা প্রতিনিধিঃ

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ধূলাউড়ি ইউনিয়নের বাউশগারীতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক নিহত শহীদদের স্মরণে ঐতিহাসিক ” বাউশগারী গনহত্যা দিবস ” উদযাপন করা হয়েছে ।১৯৭১ সালের ১৪ মে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কতৃক এখানে প্রায় ৬০০ নিরীহ মানুষ শহীদ হয়েছিল । ১৯৭১ সালে দেশব্যাপী মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বড়াল নদীর তীরবর্তী বাউশগারী, রূপসী এবং পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর উপজেলার ডেমরা গ্রাম কে নিরাপদ মনে করে বিভিন্ন এলাকার মুসলমান, হিন্দু সম্প্রদায়ের বহু লোক এখানে আশ্রয় নেয় ।
তাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন ব্যবসায়ী ও অবস্হা সম্পন্ন লোক।ঘটনার দিন পাকবাহীনি ও তাদের দোসর রা তিনটি গ্রামের উপর হামলা চালিয়ে হত্যাকান্ড, লুটতরাজ ও নারীধর্ষনের মত পৈশাচিক অপকর্মে মেতে ওঠে । গ্রামবাসী যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখন রাত চারটার দিকে দু শতাধিক পাকিস্তানি সৈন্য ও তাদের দোসর রা নির্বিচার গুলি চালায় । অসহায় মানুষগুলো ফষলের জমি ও জঙ্গলে লুকিয়ে জীবন রক্ষার চেষ্টা করে । বাউশগারী গ্রামের পশ্চিম দিকের বাঁশবাগানে গর্তের মধ্যে জীবন রক্ষার্থে লুকিয়ে ছিল প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ ।পাকবাহীনির সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদের উপর ব্রাশ ফায়ার করে । ঐ দিন ইউসুফ প্রামাণিক, শশিভূষণ কর্মকার, কসিম উদ্দীন, মন্জু রায়, নিমাই পাটনী, কোরবান আলী, মোহন দাস, জাফর প্রামাণিক সহ প্রায় ৬০০ মানুষ নিহত হয়। ঐ দিন প্রানে বেচে যান খলিলুর রহমান, মুজিবুর রহমান, আব্দুল গফুর, মোকসেদ আলী প্রমুখ । এদের কাছ থেকে জানা যায়, হিন্দু মুসলিম, নারী পুরুষ নির্বিশেষে এক এক জায়গায় একেক বার বহুজনকে দাড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করা হয় ।তাদের অধিকাংশই সাথে সাথে মৃত্যু বরন করে । অনেকে প্রার্শবর্তী বড়াল নদীতে ঝাপ দিয়ে প্রান রক্ষার চেষ্টা চালায় ।মঙ্গলবার দিবসটি পালন উপলক্ষে শহীদদের বেদীতে পুষ্প মাল্য অর্পন , আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান আতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব জাহিদুল ইসলাম ।বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন , উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল রানা খোকন, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল লতিফ, ধুলাউড়ি ইউ পি চেয়ারম্যান জারিফ আহমদ মাষ্টার সহ মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড নেতৃবৃন্দ ।
অনুষ্ঠানে সেই নির্মম হত্যাযজ্ঞ” গনহত্যা” এর উপর রচিত কবি আবুল কালাম আজাদের ” গনহত্যা ” কবিতাটি পাঠ করেন বিখ্যাত বাচিক শীল্পি সাঁথিয়া সাহিত্য, সংস্কৃতি ও আবৃত্তি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন ।তিনি তার পরিবেশনার এক পর্যায়ে উল্লেখ করেন, মুক্তিযুদ্ধ এবং হারানো মুক্তিযোদ্ধা দের আমরা আর কখনো ফিরে পাব না কিন্তু মুক্তি যুদ্ধ ভিত্তিক বই , কবিতা এবং লেখনীর মাধ্যমে আমরা নতুন প্রজন্ম মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে যথাযথ ভাবে জানতে পারব এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারন করে দেশকে এগিয়ে নিতে অগ্রনী ভুমিকা রাখতে পারব।

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin
Share on print

আরও পড়ুন