গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উত্তাল হয়ে উঠেছে তিস্তা নদী। প্রবল স্রোতে প্লাবিত হচ্ছে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী বিস্তীর্ণ নিচু এলাকা। ইতোমধ্যে ডুবে গেছে ধান ও সবজির খেত, ভেসে গেছে চাষিদের পুকুরের মাছ।বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুর ১২টায় গঙ্গাচড়ার উজানে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি কিছুটা কমে বিপৎসীমা (৫২.১৫ সেমি.) ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। যা গতরাতে বিপদ সীমার ৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইচ গেট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তিস্তা অববাহিকায় জারি করা হয়েছে লাল সংকেত।উপজেলার নোহালী, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ, গঙ্গাচড়া, লক্ষিটারী, গজঘণ্টা ও মর্নেয়া ইউনিয়নের তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে নদীর পানি ঢুকে পড়েছে। হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে গেছে বহু ঘরবাড়ি। স্থানীয়রা জানান, চরাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।নোহালী ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ আলী জানান, ইউনিয়নের চর নোহালী, চর বাগডহরা, চর বৈরাতি, মিনার বাজার, ব্রিফ বাজার ও আশ্রয়ণ বাজার এলাকার নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২৫০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।আলমবিদিতর ইউপি প্রশাসক আবতাবুজ্জামান জানান, ইউনিয়নের পাইকান ব্যাঙপাড়া ও হাজীপাড়া এলাকার প্রায় ৫০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান (প্যানেল) শরিফুল ইসলাম জানান, ইউনিয়নের শখের বাজার, খলাইর চর, মটুকপুর, আবুলিয়া, বিনবিনা, চিলাখাল এলাকার প্রায় ২০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।লক্ষিটারী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লা আল হাদী জানান, ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলি, মধ্য ইচলি, পূর্ব ইচলি, জয়রাম ওঝা, শংকরদহ ও চল্লিশ সাল এলাকার প্রায় ৩০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।গজঘন্টা ইউপি চেয়ারম্যান (প্যানেল) বকুল মিয়া জানান, ইউনিয়নের চর ছালাপাক, কালির চর ও চর রাজবল্লভ এলাকার প্রায় ১০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।মর্নেয়া ইউপি প্রশাসক মাহমুদুর রহমান জানান, ইউনিয়নের চর মর্নেয়া, নরসিংহ, রামদেব, কামদেব, নিলারপাড়া এলাকার প্রায় ১৫০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।এসব এলাকায় ফসলি জমি, বাড়িঘর ও রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে।উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদ হাসান মৃধা জানান, সাম্প্রতিক বন্যায় তিস্তার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সজিবুল করিম জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। তালিকা প্রণয়ন হলে তাদেরকে সরকারি সহায়তা প্রদান করা হবে।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সৈয়দ শাহিনুর ইসলাম জানান, বন্যার পানি কমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হবে।পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী জানান, তিস্তার পানি মঙ্গলবার রাতে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছিল। বর্তমানে পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীতীরবর্তী জনগণকে সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।