তাপস কুমার ঘোষঃ
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়নের নইরহরকাটি গ্রামের প্রবাস ফেরত কৃষক শোকর আলী এখন উপকূলীয় মাটিতে খেজুর চাষের এক নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত খুলে দিয়েছেন। একসময় বাহরাইনের খেজুর বাগানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করা শোকর আলী সেখানকার বাস্তব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশে ফিরে গড়ে তুলেছেন উন্নত জাতের খেজুর নার্সারি। তার দাবি এই অঞ্চলের মাটিতে উৎপাদিত খেজুর মরুভূমির খেজুরকেও হার মানাবে গুণমানে।বুধবার (২ জুলাই) সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, তার নার্সারির কিছু গাছে ইতোমধ্যেই খেজুর ধরেছে। শোকর আলী জানান, জীবিকার তাগিদে ২০১৮ সালে তিনি বাহরাইনে যান। কাজ করতে গিয়ে সেখানে খেজুর চাষ সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং বুঝতে পারেন এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি লাভজনক ফসল। ২০২১ সালে দেশে ফেরার সময় তিনি ৫০টি উন্নত জাতের খেজুরের বীজ সঙ্গে নিয়ে আসেন। নিজ আঙিনায় সেগুলো রোপণের মাধ্যমে শুরু হয় তার নার্সারি যাত্রা। পরবর্তী সময়ে সৌদি আরব থেকেও উন্নত জাতের বীজ সংগ্রহ করে নার্সারিকে সমৃদ্ধ করেন।বর্তমানে তার নার্সারিতে ১০ থেকে ১২ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে, যার কিছুতে ফলও এসেছে। শোকর আলীর ভাষ্য, মরিয়ম জাতের এই খেজুর গাছ দেশীয় জলবায়ুতে খুব ভালোভাবে মানিয়ে নিচ্ছে। তিনি বলেন, “প্রথম দুই বছরে গাছে ফল এলে তা কেটে ফেলতে হয়, এতে গাছ দ্রুত বড় হয়। আর ফল ধরার তিন মাসের মধ্যেই তা পেকে যায়।তিনি আরও জানান, তার নার্সারির একটি গাছে ইতোমধ্যে খেজুর পেকেছে, আর ২০ দিনের মধ্যেই তা আহরণ উপযোগী হবে।শুধু তিনিই নন, তার অনুপ্রেরণায় একই উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের শফিউল্লাহ তার চিংড়িঘেরের বাঁধে সৌদি খেজুরের চাষ করে সফল হয়েছেন। ফলে এই চাষাবাদে সম্ভাবনার দিগন্ত আরও বিস্তৃত হচ্ছে।সাতক্ষীরা হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক কৃষিবিদ আমজাদ হোসেন বলেন, “উপকূলীয় অঞ্চলের মাটি ও পানি কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির হলেও খেজুর খরা ও লবণাক্ততা সহনশীল ফসল হওয়ায় এর চাষ সম্ভব। পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ করা যেতে পারে।তিনি আরও বলেন, “প্রতিবছর বাংলাদেশে রমজানসহ অন্যান্য সময়ে বিপুল পরিমাণ খেজুর আমদানি করতে হয়। অথচ দেশে উন্নত জাতের খেজুর উৎপাদন হলে আমদানির ওপর নির্ভরতা কমবে এবং কৃষকরাও লাভবান হবেন।বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকায় খেজুরের মতো টেকসই ফসল চাষ নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে।